পারমিতা, দীপেশ সুব্বা ও সেই চোখ
বিজয়া দেব
দীপেশ সুব্বা নমস্কার করল। আকাশরঙা জিনস, সাদা পাঞ্জাবী, মুখে অনাবিল হাসি। এখনও হাসিতে সারল্য বেঁচে আছে, দীপেশকে দেখে মনে হল।
সমতল ও পাহাড়ের মানুষের মাঝে পার্থক্য আছে। সমতলের মানুষের মাঝে বড্ড জটিলতা। জীবনের আঁকিবুকি রেখায় জর্জরিত জীবনযাপন। এখানে তেমন নয়।
নারীধর্ষণেও সমতল এগিয়ে। পাহাড়ি মেয়েরা অনেকটাই স্বাধীন, খুব পরিশ্রমীও। এরা পুরুষের উপর নির্ভরশীল নয়। অথচ সভ্য সমাজের মানুষ বা তথাকথিত সুশীল সমাজের মানুষ এদের জীবনযাপনের উপর তেমন আলোকসম্পাতও করে না।
রেস্তরাঁর ভেতরে পাহাড়ি মানুষেরাই খাবার তৈরি করছে। রেস্তরাঁর পেছনে দীপেশ সুব্বার বাড়ি। টিনের চাল, পাকা ঘর, সামনে প্রশস্ত বারান্দায় দুটো বেতের চেয়ার, একজন পাকাচুলো বুড়ো লোক বসে আছে। পারমিতাকে উঁকি মেরে তাকাতে দেখে দীপেশ হেসে বলে - মেরে দাদাজি। ধূপ মে ব্যয়ঠা হুয়া। - কথাটা শেষ হতে না হতেই ছবিতে দেখা পাহাড়ি রমণীর মতই পাহাড়ি ঝুড়ি মাথায় নিয়ে বেরিয়ে এল এক প্রৌঢ়া।
দীপেশ বলে - ইয়ে হ্যায় মেরে দাদি। এখন পাহাড়ে যাবে। ওখানে পাহাড়ি ফুল মিলবে। সাদা অর্কিড, ঝুড়িতে তুলে আনবে, বিকেলে বাজারে বিক্রি করবে। জল ছিটিয়ে দিয়ে তাজা রাখবে, বিকেলে ফুলের বাজারে বিক্রি হবে।
- আউর দাদাজি নেহি যাঁতে ?
- নেহি জী। হমারা আওরতলোগ ইয়ে কাম করনা পসন্দ করতে হ্যায়। And our society is matriarchal।
বাহ্ দীপেশ সুব্বা তো ভালো ইংরেজী জানে।
-কোন পাহাড়ে যাবে ?
-জী ডাওহিল।
পারমিতা চমকিত হয়ে বলে - ডাওহিল ?
-জী। ইয়ে দেখিয়ে ডাওহিল যানে কা রাস্তা। লেকিন ইতনা দূর যানে কা জরুরত নেহি, দাদিজি আসপাস সে কালেক্ট করেঙ্গে ফুল, স্পেশালি হোয়াইট অর্কিড।
ডাওহিল। অনেক রোমাঞ্চক গল্প আছে ডাওহিলকে ঘিরে। একদিন কী সে দাদির সঙ্গে যেতে পারে ? মাথায় পাহাড়ি ঝুড়ি নিয়ে, সংগ্রহ করবে সাদা অর্কিড, তারপর ফুলবাজারে গিয়ে তা বিক্রি করবে।
আগে থাকার বন্দোবস্ত হোক। তারপর ব্যাপারটি নিয়ে ভাবা যাবে।
কার্শিয়াং এর একটি রেস্তরাঁয় বসে রেস্তরাঁর মালিক দীপেশ সুব্বার সঙ্গে কথা বলতে বলতে পারমিতা ভাবছিল দীপেশের দাদি এই বয়েসে পাহাড়ে গিয়ে ঝুড়িভর্তি ফুল নিয়ে আসবে বিকেলে বাজারে বিক্রি করবে - এই চমৎকার প্রাকৃতিক আবহে একটা মুক্ত স্বাধীন জীবনযাপনে কী জানি কতখানি মুক্তি ও আনন্দ আছে ! একবার তো তার স্বাদ নিতেই হয়।
পাহাড়িদের অনেকটাই সরল স্বচ্ছ যাপন। অথচ সমতলের জীবনে পদে পদে অস্বস্তি, বক্রতায় জটিল, অদ্ভুত অস্বচ্ছ যাপন, একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে পারমিতার। কেন ? মানসিক পরিমন্ডল কি ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে নাকি ?
দীপেশ হেসে বলে - আপ কিধর ঠ্যয়রে হো ?
-এখনও কোথাও যাই নি। খিদে পেল তাই গাড়ি থামিয়ে এখানে খেতে এলাম। তবে দু'চারটা হোটেলের নাম এনেছি।
দীপেশ উৎসাহিত হয়ে বলে - আমার হোটেল ভি আছে। বহোত আচ্ছা। আপকো পসন্দ হোগা।
পারমিতা হেসে বলে - বেশ।
পারমিতা একা এসেছে কার্শিয়াং। মনটা বিকল হয়েছিল। সারাদিন আই টি অফিসের কাজ, প্রমোশন নিয়ে টানাপোড়েন, সহকর্মী যাকে ভালবাসত সম্প্রতি তার সাথে সম্পর্কচ্যুত হয়ে যাওয়া... অতি-উত্তর আধুনিকতার আবহে যার চালু নাম - ব্রেক আপ। তার দেহ চায় শৌভিক। তার আর তর সইছে না। সেদিন কথা বলতে বলতে এত জোরে তাকে চেপে ধরেছিল যে তার মনে হচ্ছিল স্থান কাল পাত্র বিশেষে এই শৌভিক একজন ধর্ষক হতে পারে। সে এতে রাজি না হওয়ায় চটে লাল। বলেই দিল - তার নাকি শারীরিক সমস্যা আছে, ডাক্তার দেখানো দরকার।
আচ্ছা এই সময়ে কেন এমন হচ্ছে ? শারীরিক মিলনের ইচ্ছে হয়ত তারও হত। তারজন্যে তো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন ছিল। ভালবাসা নামে শব্দটা হঠাৎ করে এমন " নেই " হয়ে গেল ? পণ্যায়িত আবহে সত্যিই ভালবাসা টিঁকতে পারে না, উভয়ের মধ্যে পরস্পরবিরোধিতা আছে।
এই সময় ও সমাজে টিঁকে থাকতে হলে একক অস্তিত্বে বিশ্বাসী হতে হবে, এছাড়া আর কোনও বিকল্প আদৌ নেই।
পারমিতা ভাবছিল সে ইচ্ছে করলে পাহাড়ি মেয়েদের নিয়ে গবেষণা করতে পারে। ওদের জীবনযাপনের মধ্যে একটা খোলা হাওয়া আছে। পাহাড়ি মেয়েদের পাহাড়ি ছেলেরা ধর্ষণ করেছে বলে শোনা যায়নি। ওটা হতে পারে সমতলের মানুষের দ্বারা। পিতৃতন্ত্রের শিরাউপশিরা ছড়িয়ে পড়েছে যে দেহ কাঠামোতে।
দীপেশ সুব্বার হোটেলটি বেশ পছন্দ হল। ততটা বড় নয়, তবে পাহাড়ের কোলে, ভারি মনোরম। দীপেশ বিকেলে দেখা করতে এল। জানতে এল- সব ঠিক আছে তো ? পছন্দ হয়েছে তো হোটেলের ঘর, খাওয়াদাওয়া ?
পারমিতা বলে - সব ঠিক আছে, তবে আমি আপনার দাদির সঙ্গে ডাওহিল যাওয়ার পথে হেঁটে যেতে চাই। সেই ঝুড়ি মাথায় ঝুলিয়ে, পাহাড় থেকে সংগ্রহ করব ফুল, ঝুড়ি ভর্তি করব তারপর ফুলের বাজারে গিয়ে সাদা অর্কিড বিক্রি করব।
দীপেশ হেসে বলে - অ্যাডভেঞ্চার ?
পারমিতা - উহুঁ তা নয়,অনলি টু কালেক্ট এক্সপেরিয়েন্স।
দীপেশ - দাদিজি পয়দল যাতা হ্যায়, ইটস নট পসিবল ফর ইউ।
পারমিতা - দাদিজি পারলে আমি পারব না ?
দীপেশ - আমরা তো পাহাড়ে থাকি, দাদি যেটা পারবে আপনি পারবেন না। আপনাদের সুখে থেকে অভ্যাস... ডোন্ট মাইন্ড, ইয়ে ফ্যাক্ট হ্যায়।
ঠিক আছে আমি আপনাকে নিয়ে যাব, গাড়িতে যাবেন।
পারমিতা - কিন্তু আমি দাদিজির মত মাথায় ঝুড়ি ঝুলিয়ে যেতে চাই।
দীপেশ হা হা করে হেসে উঠল। বলল - বেশ ঝুড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। ওখানে গিয়ে মাথায় ঝুলিয়ে অর্কিড তুলবেন। ঠিক আছে, আগামীকাল যখন দাদি বেরোবে তখন আমি আসব গাড়ি নিয়ে, কাল দাদিজি ভি গাড়িতে যাবে। আপনাকে সোজা ডাওহিল নিয়ে যাব। ওটা দেখুন আগে, তারপর আপনার ফুল বিক্রি করার ব্যবস্থা করে দেব। তবে ডাওহিল সম্পর্কে সব খবর জানা আছে ? ওখানকার অশরীরীর সম্পর্কে ? ওরা দিনদুপুরেও ঘাড় মটকাতে আসে। ভয় পাবেন না তো ?
-দাদিজিকে ধরে না ?
-আরে দাদিজিকো সাথ তো উনলোগোকো দোস্তি হ্যায়।
হা হা করে হেসে উঠল দীপেশ।
পারমিতা শুনেছে। শুনেছে সে ডাওহিলে নাকি অশরীরীরা চলে ফিরে বেড়ায়। অনেকদিন পর একটা রোমাঞ্চ অনুভব করল পারমিতা। এক ভিন্ন অনুভব।
হোটেলের যে ঘরটাতে সে আছে তার ঠিক পেছনের জানালার নিচে পাহাড়ি ঝোরা, আজ আকাশ স্বচ্ছ আর আকাশে এয়োদশীর চাঁদ। ঘরের আলো নিভিয়ে দিলে মনে হয় সাদা শাড়ি পরা এক চটুল নারী যেন নাচতে নাচতে উপর থেকে নেমে আসছে। পাহাড়ে ঝুলে আছে সাদা ম্যাগনোলিয়ার ঝাড়। চাঁদের আলোয় কী এক অপার্থিব পরিবেশ ছড়িয়ে আছে, মোহাবিষ্ট পারমিতার দীপেশ সুব্বার সরল হাসিমাখা মুখটা মনে পড়ল। একটা ভালো লাগা অনুভব। আবিষ্ট চিত্তে ঘুমিয়ে পড়ল সে।
একটি জিপ নিয়ে এসেছে দীপেশ। আজ আর ট্রাউজার্সের ওপর সাদা পাঞ্জাবি নয়, ছাইরঙা জিনসের ট্রাউজার্সের ওপর ঘন নীল টি শার্ট। খুব ফর্সা দীপেশ। বেশ লাগছে দেখতে। পারমিতা তৈরি হয়েই ছিল।
জিপের পাশে এসে বলল - দাদিজি ?
দীপেশ স্মিতমুখে বলে - দাদিজি চলে গেছে। গাড়ি পছন্দ নয়।
-কেন ?
-বলে গাড়ি চড়লে তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাবে।
দীপেশ একই সঙ্গে হিন্দি ইংরেজি বাংলায় কথা বলে।
কোথা থেকে অপূর্ব এক গন্ধ বেরোচ্ছে। কেমন মাতাল করা গন্ধ। পাহাড়ি ফুলের গন্ধ।
-আইয়ে।
জিপের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে দীপেশ। সেই সরল হাসিমাখা মুখ।
পারমিতা খুশি। খুব ভালো লাগছে। কেন কে জানে, এই জীপগাড়ি এই সাপের মত বেঁকে বেঁকে ক্রমশ উপরে উঠা এই মসৃণ পাহাড়ি রাস্তা, লম্বা লম্বা পাইনের সারি, ফার্ন, পিপল, শাল... আর গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে যে - দীপেশ সুব্বা... বড্ড ভালোলাগার...
-ইয়ে দেখিয়ে ম্যাডাম লালিগুরাস, ইসকা আউর এক নাম হ্যায় - রডোডেনড্রন... " উদ্ধত যত শাখার শিখরে রডোডেনড্রনগুচ্ছ "
এবার পারমিতার অবাক হবার পালা।
-আরে ! আপনি রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন ?
-নেহি ম্যাডাম য়্যয়সা কুছ নেহি। ইধর মে ট্যুরিস্ট লোগ আঁতে হ্যায় না ম্যাডাম, তো ম্যয়নে উনলোগো সে কুছ কুছ সিখ লিয়া, ম্যয় গাইড ভি হুঁ...
হিলকার্ট রোড ধরে এগিয়ে যেতে যেতে গাড়ি ডানদিকে মোড় নিল।
-আচ্ছা, শুনেছি এখানে প্রেতাত্মার রাজত্ব। আপনাকে তো এখানে অনেকবার আসতে হয় নিশ্চয়ই, তাছাড়া আপনার দাদিজি তো আসেন, কখনও কিছু...
-আপ তো খোদ যা রহেঁ হ্যায়, দেখ লিজিয়ে আপকো ক্যয়সা ফিলিংস হোতা হ্যায়... আই মিন এক্সপেরিয়েন্স…
যত উপরে উঠছে তারা ততই হালকা কুয়াশার মত মেঘ তাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে… ভাসছে... সাঁতার কাটছে...
একটা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ডাওহিল। পাশ ঘেঁষে ডাওহিল অরণ্য। দীপেশ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে প্রায় ঝুলে থাকা একটি বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই কিছু নারীপুরুষের মুখ উঁকি দিল দরজায়, ঝোলানো পর্দা সরিয়ে। দীপেশ লেপচা ভাষায় কিছু একটা বলল। দুজন ভেতরে গেল। একটি কিশোরী কৌতূহল নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
দীপেশ বলে - নেমে আসুন। পাহাড়ের গরম চা না কি কফি ?
পারমিতা তো কফি ভালবাসে…
খুব পরিচ্ছন্ন গোছানো টেবিল চেয়ার, বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না এটা রেস্তরাঁ।
এক লেপচা পুরুষ মোটা করে মাখনের প্রলেপ দেওয়া দু'পিস করে পাউরুটি দুখানা, ডবল ডিমের অমলেট ও দু কাপ গরম কফি এনে রাখল টেবিলে।
দীপেশ হেসে বলে - লিজিয়ে ম্যাডাম।
তারপর লেপচা ভাষায় লোকটির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলল।
বেশ ঠান্ডা। এটা সেপ্টেম্বরের শেষ।
ওরা বেরিয়ে পড়েছে, আরও কিছুদূর এগিয়ে জিপটা একপাশে থামিয়ে ওরা নামল। দুজন পাহাড়ি যুবক বসে আছে। দীপেশ লেপচা ভাষায় কিছু একটা বলল। পারমিতা আন্দাজ করল সম্ভবত জিপটার দিকে একটু নজর রাখতে বলছে। তারপর পারমিতাকে বলল-এখন আমরা পায়ে হেঁটে যাব।
যত এগোচ্ছে ততই নির্জনতা। পারমিতা জানে এখানে অনেক ঘুঘু জাতীয় পাখিদের বাস। লেপচা ভাষায় ঐ পাখিকে বলে "ডাও" - তাই এই পাহাড়ের নাম ডাওহিল। ঐ কথাগুলোই এখন দীপেশ বলতে বলতে যাচ্ছে।
যতই এগোচ্ছিল তারা ততই নিবিড় অরণ্য ও নিঃসীম নির্জনতা এগিয়ে আসছিল ক্রমশই। মোহাবিষ্টের মত পারমিতা এগোচ্ছে, সে মিশে যাচ্ছে পাইন, ওয়ালনাট, শাল পিপুল ও লতাগুল্মেবেষ্টিত মোহময়ী এক অরণ্যের আকর্ষণে। পাতলা কুয়াশায় আবৃত হয়ে আছে চারপাশ, নির্জনতা যে এমন অদ্ভুত ও রহস্যময় হতে পারে ধারণা ছিল না পারমিতার। আরও কিছুদূর এগিয়ে সে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে দেখছিল, সে অনুভব করছিল, মনে হচ্ছিল প্রকৃতির এই নিবিড় একাত্মতার ভেতর সে ক্রমশ যেন আত্মস্থ হয়ে পড়ছে।
একটা অজানা পাখির তীক্ষ্ণ সুরে সম্বিৎ ফিরল তার, চমকে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই তার সাথে। কোথায় গেল দীপেশ সুব্বা ? সে ডাকতে চাইল অথচ গলা দিয়ে একটুও স্বর বেরোল না। দীপেশ তাকে এখানে একা ফেলে চলে গেল ? মনে হল অরণ্যের নিবিড়তার ভেতর থেকে দুটো চোখ যেন তাকে দেখছে - চোখদুটি কি সেই লাল চোখ ? ডাওহিলের সেই লাল চোখ ? মনে হতেই তার গা ছমছম করতে লাগল। তবে সে অরণ্যের বাইরেই দাঁড়িয়ে, ভেতরে ঢোকেনি, কী ভীষণ আকর্ষণ ঐ অরণ্যের, সে আঁতিপাঁতি করে দেখছে ঐ দুটি চোখে.. হ্যাঁ মনে হচ্ছে কেউ তাকে দেখছে.. সেই দুটি চোখ... সেই দুটি চোখ কি সেই লাল চোখ ? এবার হঠাৎ মনে হল কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ছে আর দীপেশ তার সাথে নেই। আতঙ্ক আবার তাকে গিলে খেতে এল। দু পা পিছিয়ে যেতেই তার কাঁধে সজোরে ধরল কেউ। ফিরে তাকিয়ে দেখে দীপেশ সুব্বা। সেই সরল হাসিমাখা মুখ।
-ক্যয়সা লাগা ? হোআট অ্যান্ড হাউ ডু ইউ ফিল নাউ?
পারমিতা অপলক তাকিয়ে আছে দীপেশ সুব্বার দিকে, নিশ্চল।
একটু অস্বস্তির সাথেই পারমিতার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিল দীপেশ।
বলল - আরে ! আপ তো ডর গ্যয়ে ! কুছ দেখনে কো মিলা ?
পারমিতা এখনও কথা বলতে পারছে না।
একবার সেই দুটি চোখ দেখার জন্যে অরণ্যে তাকাল সে। উহুঁ এখন নিরীহ গাছপালা কুয়াশা মেখে নির্লিপ্ত দাঁড়িয়ে।
দীপেশ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল - চলিয়ে। শোচা থা আপকো ডেথ রোড সে ফরেস্ট অফিস তক লে জায়েঙ্গে। লেকিন আজ নেহি...আপনি তো ডরিয়ে গেছেন। চলুন ফিরে যাই।
দীপেশের হাত ধরল না পারমিতা।
রাগ করে বলল - একা আমাকে ফেলে কোথায় চলে গেছিলেন ? হাত ধরব না আপনার।
দীপেশের সেই হা হা অনাবিল হাসি - আপনার কি মনে হয়নি অরণ্যের ভেতর থেকে কেউ আপনাকে দেখছে ?
পারমিতা শিউরে উঠে।
বলে - হ্যাঁ, তাই মনে হয়েছে।
দীপেশ বলে - ম্যাডাম, প্রকৃতির প্রাণ আছে, ইয়ে পের চল নেহি সকতে... এজন্যে মানুষ তার ওপর যথেচ্ছ অত্যাচার করে। সে আপনাকে আমাকে বিশ্বাস করবে কেন ?
-আসুন। আমার হাত ধরুন, মনে জোর পাবেন। ভয় নেই। আমরা মেয়েদের সম্মান করি, গাছপালা ভালবাসি, এই অরণ্যের পূজাও আমরা করে থাকি। ঐ দুটি চোখ ঈশ্বরের চোখ, ইনি গাছপালা বৃক্ষলতার ঈশ্বর। মানুষের হাত থেকে গাছপালাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আসুন।
পারমিতা হাত বাড়িয়ে দেয়। দীপেশের হাত ধরতেই অপূর্ব এক প্রশান্তি অনুভব করে অনেক অনেকদিন পর।
আনবদ্য।
ReplyDelete