Wednesday 27 July 2022

সংখ্যা একাদশ।। ২৭জুলাই২০২২।।ছাপ।।শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

 ছাপ 

শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

তিরিশ বত্রিশ বছর আগের কথা। ভিটে মাটি কেন্দ্রিক মফস্বল কাঁচরাপাড়া তখনো আমার চোখে দেখা জন্মভূমি। জমিজমা, বসতভিটে, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বেড়ে ওঠা মানুষজন, এক বাড়ির সঙ্গে আর এক বাড়ির অলিখিত সেতুবন্ধন, পাড়াঘরকে জড়িয়ে থাকা আবেগ... এই অভ্যস্ত জীবনের ছন্দময়তা সত্তর, আশির দশকের পথ ধরে নব্বইয়ের গোড়ার মানুষগুলোকে তখনো স্বাচ্ছন্দ দিত, আলো দিত, বাতাস দিত। চাহিদাকেন্দ্রিক বিজ্ঞাপিত জীবনের অল্পবিস্তর ছোঁয়া সে জানলা দিয়ে যে একেবারে প্রবেশ করতো না এমনটা নয়, তবে সে ছিল পরিযায়ী মেঘ কিংবা দখিনা বাতাসের মতো সংসারের ছকে বাঁধা গন্ডীর মাঝে নিজেকে ফিরে পাওয়ার এক ভিন্ন মেরুর জীবন বোধ৷ 

অন্যের কাছে নিজেকে বিলিয়ে যে আনন্দটুকু পাওয়া যায়, সেরকমই এক আনন্দময় চরিত্রের মানুষ ছিলেন আমার জগন্নাথ জেঠু। সংসারে এমন ধরণের চরিত্র খুঁজে পাওয়া আজকের যুগ বা সমাজ কাঠামোয় দাঁড়িয়ে বিরলতম বললেও হয়তো অত্যুক্তি হয় না। যত দিন গেছে মহার্ঘ হয়েছে সময়, মহার্ঘ হয়েছে সেসব ভিন্ন মেরুর জীবন বোধ। 

যখনকার কথা লিখছি, সেটা নব্বইয়ের শুরু। এতদিন সেই শুরুর মানুষটির কথা মাঝেমধ্যে মনে পড়লেও লেখা আর হয়নি। লেখার তো কোনো বয়স থাকে না। তাই বোধহয় সঠিক সময়ও থাকে না। আজ তাঁকে নিয়েই আমার এই লেখা। 

জগন্নাথ জেঠু আর আমরা একই পাড়ার বাসিন্দা। জেঠুদের বাড়িটা দেখলে সত্যিই যেন মনে হয়, না জানি কতকালের পুরোনো !  

যবে থেকে চোখ মেলে পৃথিবীকে দেখতে শিখেছি তবে থেকে, বলতে গেলে এই সেদিন পর্যন্ত বাড়িটার দেওয়ালের আবছা রঙটুকুই আমার দৃষ্টিপথে চিরনবীন হয়ে থেকে গিয়েছে। ছাদের ভাঙা কার্ণিশ, মরচে ধরা জানলার গরাদের নীচের স্তরে ভগ্নপ্রায় দেওয়ালের অংশ, প্লাস্টার খসা রেলিংয়ের শ্যাওলা ধরা ইট পাথরের খাঁজ বরাবর যত্রতত্র বেড়ে ওঠা লতাপাতা, আগাছার শিকড়, বাইরে থেকে দেখা সিঁড়ির ঘরের ফুটিফাটা ধূলিধূসরিত কাচের শার্সি...এগুলোও যেন আমার শৈশব থেকে দেখে আসা ঐ বসতভিটারই আরও এক চিরনবীন চিত্র...যে বাড়ির বহিরঙ্গের চেহারাটা নেহাৎই জোড়াতালি দেওয়ার মতো সময় সময় হয়তো বা উনিশ বিশ বদলালেও মোটের ওপর জগন্নাথ জেঠুদের ঐ ফ্যাকাশে লাল রঙের দেওয়ালটা আর কাঠের নড়বড়ে সদর দরজার কিছুটা ওপরে শ্যাওলা ধরা আলসের গায়ে পাথরের সাইনবোর্ডে লেখা ' ইন্দিরা ভবন' নামের প্রায় উঠে যাওয়া ঝাপসা কালো কালির হরফগুলো যত দিন গেছে, মনের গভীরে তৈরি হওয়া চক্রবর্তী বাড়ির ছবিটাকে তত বেশি করে সিম্বলাইজ করে তুলেছে। 

বাবা বলতেন, ' ও বাড়ির বয়স আমাদের বাড়িরও আগেকার। জগন্নাথ দা'র বাবা বিষ্টু চক্কোত্তি সে আমলে যজমানি করে বেশ কিছু পয়সা করেছিলেন... তেজারতি কারবারি গৌর সাঁধুখার কাছ থেকে হাজার টাকার বিনিময়ে জমিজমা সমেত দোতলা বাড়িটা কেনেন। আমরা আর বিষ্টু চক্কোত্তিরা তখন নকড়ি মন্ডল রোডের পুরোনো পাড়ায় পাশাপাশি দু বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। তখন থেকেই আমাদের ও বাড়ির বাঁধাধরা পুরোহিত ছিলেন বিষ্টু, সেই সূত্রে বাবার সঙ্গে বহুদিনের পরিচয়। চক্কোত্তিই বাবাকে নিয়ে এসেছিলেন এ পাড়ায়...উনি বাড়ি কেনার পরের বছর গৌড় সাধুঁখার থেকেই বাবা এই জমিটা কেনেন...তারপর ধীরে ধীরে মাথা গোঁজার মতো একটা ভিটে তৈরি হলো আমাদের ...চিলতে রোয়াক আর একটা মাত্র ঘর...সেসব কতকালের কথা! ভাবলে মনে হয় একশো বছর পেছনে ফেলে এসেছি ! বিষ্টু চক্কোত্তি যা যেটুকু সম্পত্তি করে দিয়ে চলে গেল, তার ওপর বসে জগন্নাথ দা বাপের সম্পত্তি ভোগ করেই জীবন কাটিয়ে দিল...এই তো সেদিন গেছিলাম সরস্বতী পূজোর ফর্দ নিয়ে আসতে আর কথা বলতে...অনেক আগে মেশোমশাই থাকাকালীন বারকয়েক গেছি, ছোটোবেলায় বাবার হাত ধরেও গেছি...তখন কিরকম ছিল সে বাড়ি, আর এখন কি হাল হয়েছে ঘর দোরের...স্যাঁতসেঁতে নোনা ধরা দেওয়াল, রাজ্য জুড়ে উঁইয়ের ঢিবি, ঘুণে খাওয়া কাঠের জানলা...বাইরে থেকেই যা অবস্থা দেখি ! কি আর করবে...যজমানি করে ঐ যা দুচার পয়সা হয়...বাপের মতো রাজ্যপাট তো আর খুলে বসতে পারলো না। ও বাড়ি মেরামত করতে গেলে এখন খোলনলচে বদলাতে হবে...গিয়ে দেখি ছাদে উঠে খুরপি দিয়ে দেওয়ালের আগাছা কাটছে জগন্নাথ দা...আমায় দেখে হেসে বলে, " ভাবি ঝেঁটিয়ে দূর করবো...আবার কি করে ঠিক গজাবে...শিকড় ওপরাতে গেলে দেয়াল খসাতে হবে...পরগাছাগুলো বোধহয় বাকি জীবনটা ভিটে আঁকড়েই পড়ে থাকবে..."

কথাটা বেরিয়েই এলো মুখ থেকে , " বাড়িটা ছাড়ুন..."

বলে কিনা, " তোমাদের ছেড়ে যাবোই বা কোথায়...গেলেই তো মুখগুলো মনে পড়বে..."

অদ্ভুত লোক...!'

এই অদ্ভুত লোকটার বাড়ির বাগানে স্কুল ফেরত বিকেলবেলা কতই না খেলাধূলা করেছি, ছুটোছুটি করেছি, ক্যাম্বিস বল নিয়ে ড্রপ ক্যাচ খেলতে খেলতে ফ্যাকাশে বিবর্ণ দেওয়াল আরো বিবর্ণ হয়েছে শরীরময় বলের ছোপে, ফাল্গুণ পড়তে না পড়তেই বাগানের কুলগাছগুলো প্রায় সাফা হয়ে যেত আমাদের সৌজন্যে...জৈষ্ঠ্যের খরতপ্ত দুপুরে খেলতে খেলতে ঢিল মেরে আম চুরী করা...সে উপদ্রবও কি কিছু কম করেছি জগন্নাথ জেঠুদের জমি বাগানময়! সেসব নিয়ে ঠাকুমা মানে, জেঠুর মায়ের গালমন্দ যেমন কম খাই নি, সেই গালমন্দ খেয়ে দুদিন হয়তো ভয়ে আর বাগানেই যেতাম না ...কোত্থেকে জেঠু এসে আবার আমাদের ধরে নিয়ে আসতেন...' কি রে খেলতে যাস না কেন আর ? '

' ঠাকুমা যদি লাঠি নিয়ে তাড়া করেন আবার ?'

' দুষ্টুমিটা বুঝি একটু বেশিই করে ফেলেছিস? যাস, তোদের জন্য মা কুলের আচার করে রেখেছে...'

সত্যিই যেন অবাক হয়ে গেলাম। ঠাকুমা যে আমাদের প্রতি এতটা সদয় তা তো আগে বুঝি নি ! 

ব্যাস ঐ শুনে পরের দিন থেকে আবার পাড়ার কচি কাঁচারা সদলবলে জেঠুর বাগানে।

বুড়ি মাকে নিয়ে বাড়িটাতে একাই থাকতেন জগন্নাথ জেঠু। মাঝে মাঝে জেঠুর এক বিয়েওলা বোন দথু পিসি না কি জানি নাম, তিনি আসতেন কালেভদ্রে। এছাড়া কোনোকালে জেঠুর আর কেউ ছিল কিনা, আমি দেখি নি।

জ্ঞান হওয়া ইস্তক আমি জেঠুকে দেখেছি আমাদের বাড়ির পুজো-আচ্চায় পৌরহিত্য করতে। ফি বছর সরস্বতী পূজার আগে বাবা সাততাড়াতাড়ি জেঠুর বাড়িতে চলে যেতেন, ফিরে এসে যেন হাঁফ ছাড়ার ভঙ্গিতে বলতেন, ' ছোট চক্কোত্তিকে বলে এলাম...সকাল সকাল পুজোয় বসবে...পাড়ায় এখন ছোট বড় অনেকেই যজমান বনে গিয়েছে...আগের সে দিন নেই যে বিষ্টু চক্কোত্তির মতো সবাই একটাই পুরোহিত ধরে বসে থাকবে...তবে কি জানো গিন্নি, বড় চক্কোত্তি ছিল আমাদের একসময়ের কুলপুরোহিতের মতো...তাই বোধহয় ছোট চক্কোত্তি যখন এ বাড়ির পুজোয় বসে, অদ্ভুত শান্তি পাই...হুলো এদিকে একটু শোন...'

ঠিক তখনই আমার বুকের ভেতরটা ধরাস করে ওঠে...এই রে গতকাল আমরা তিন বন্ধু মিলে জেঠুর বাগানের গুচ্ছ গুচ্ছ কুল চুরি করে পালাতে গিয়ে বুড়ি ঠাকুমার হাতে ধরা পড়ে গেছিলাম ! অপরাধ কি একটা ! জগন্নাথ জেঠুর দেওয়ালে বল থ্রোয়িং প্র্যাকটিস করতে গিয়ে গাবলুটা সিঁড়ির ঘরের শার্সির কোণের দিকের খানিকটা অংশ বেয়ান্দাজে বলের ঘায়ে ভেঙেই দিল শেষমেশ....আর ঠিক তখুনি বুড়ি ঠাকুমা কোথা থেকে এসে...' কে রে ? ও কিসের ঝনঝন আওয়াজ ! গাবলুটা ওরকম পালাচ্ছে কেন রে? কি করেছে হতচ্ছাড়া? ও মা গো...দ্যাখ দ্যাখ, জগন্নাথ, তাকিয়ে একবার দ্যাখ...তোর বাবার আমলের কাচের জানলাখানা...!'

সেসব কথা ভাবছি আর প্রহর গুণছি,এই না বাবা এবার বলতে শুরু করেন...' কাল তোরা কুল চুরি করতে গেছিলি? মাসিমা আমার সামনে খ্যাকম্যাক করে উঠলেন...তোদের জন্য এবার কি আমায় অন্যের কাছে বেইজ্জত হতে হবে ? '

সে প্রসঙ্গে বাবা যখন কিছুই বললেন না, তখন আমিও একপ্রকার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম বটে, কিন্তু দিন দুই পরে জগন্নাথ জেঠু যেদিন আমাদের বাড়ি এসে আমায় বলে গেলেন, ' যাস, তোদের জন্য মা কুলের আচার বানিয়েছে...'

 বাবা খানিকটা অবাক হয়ে বললেন, ' এই বয়সে, এই শরীরে মাসিমা এখনো যে কি করে এত কিছু করে চলেছেন ভাবলে সত্যিই...! '

'সেটা কে কাকে বোঝাবে বলো? এই তো সেবার কি জ্বরেই না পড়লেন! কবে থেকে বলে আসছি, 'রান্নাবান্নার জন্য এবার একটা লোক রেখে দিই...আশপাশের বাড়িতে যারা কাজটাজ করে, কথা বলে দেখি না একবার ...'

বলে, "ওসব অজাত কুজাতকে ধরে আনবি, আর আমি তাকে সদর দরজার চৌকাঠ পেরোতে দেবো, ভাবলি কি করে ? ধম্মের নামাবলি পরে পরকালে তাঁর কাছে কী জবাব দিবি? ওনার ভিটেতে আমি এসব করতে দেবো না..."

' এর পর আর কি ই বা বলার থাকতে পারে! ঈশ্বর কোথায় বাস করেন...ঘরে না বাইরে...সে অস্তিত্বের সন্ধান করতে করতে পিতৃদেব একদিন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন...সেখানে দাঁড়িয়ে আমিই বা মাকে কি করে বোঝাবো, সে সাধ্য কি আর আছে !'

জ্ঞান হবার পর যবে থেকে জেঠুদের বাগানে গিয়ে খেলতে শিখেছি, তবে থেকে লাঠি হাতে ঠকঠক করতে করতে কোলকুঁজো হয়ে চলা ঠাকুমার হাঁক ডাক টাই কেবল শুনে আসছি। সেই ঠাকুমা কখনো অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন, এ যেন আমাদের অভ্যস্ত চোখের ধারণার বাইরে। মানুষের জীবন, বার্ধক্য, বয়স জনীত অসুস্থতা..এসব নিয়ে ভাবার মতো বা কাছ থেকে দেখার মতো চেতনার স্তর খুব স্বাভাবিক নিয়মেই তখন আমার মধ্যে গড়ে ওঠে নি। ঘন্টা কয়েকের খেলাধূলার মুহূর্তময়তার মাঝে জড়ানো জগন্নাথ জেঠুর বাগানখানা যতখানি চেনা এক উজ্জ্বল ছবি,ঠিক ততখানিই অচেনা সে বৃত্তের বাইরে পড়ে থাকা জীবন চেতনার স্তর।

সে জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে ' তোদের জন্য মা কুলের আচার বানিয়েছে...' আমার মনের অন্তঃকরণে ভেসে ওঠা সেদিনের ঠাকুমার ছবিটা যেভাবে আমায় বিস্মিত করে তুললো, তেমনটা অবাক এর আগে আমি কখনো হয়েছি কিনা সত্যিই মনে পড়লো না। 

একগাল হেসে জেঠু এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ' তোরা একদিন খেলতে না এলে বাগানটা আমার খাঁ খাঁ করে...ওদের জন্য অপেক্ষা করে থাকি বুঝলে না? ওরা খেলা শেষ করে বাড়ি যায়, তবে আমি ঘরে গিয়ে জপ আহ্নিকে বসি...ওদের দাপাদাপিতে মা ও একটু হাঁক ডাক করার সুযোগ পায়...নয়তো বাড়িটা কেমন নিষ্প্রাণ... '

শেষের কথা গুলো বাবার উদ্দেশ্যে। 

' কোনো দুষ্টুমি করেছে নাকি ?'

বাবা ব্যস্ত হয়ে এগিয়ে আসেন। ভয়ে কুঁকড়ে যাই আমি। সেদিনের কথাটা বলবার জন্যই কি জেঠু আজ আমাদের বাড়ি ছুটে এসেছেন? সর্বনাশ ! 

' না না ও কিছু না। খেলতে গিয়ে বাচ্চারা একটু আধটু দুষ্টুমিই যদি না করে...ওদের সময় আমরা কেমন ছিলাম একবার ভাবো তো হে ধীরাজ...এখন আর ছেলেপিলেরা খেলবার সুযোগ তেমনটা আর পায় কোথায় ! মাঠঘাট কত কমে আসছে...পাড়ার ভেতর ওরাই তো আমার চৌহদ্দিটাকে জাগিয়ে রেখেছে...ইয়ে, একটা বিশেষ খবর দিতে এলাম ধীরাজ...বাজারে গিয়েছিলাম, ভাবলাম বলেই যাই...'

জেঠু যে অনেকক্ষণ থেকেই কিছু একটা বলবার জন্য উসখুস করছিলেন, এটা আমি বেশ টের পাচ্ছিলাম। কী আবার খবর? কৌতুহল যে কিছুতেই কেটেও কাটতে চাইছে না আমার! 

জেঠুর হাতে একটা বাজারের থলে ব্যাগ। আর এক হাতে ছাতা। ঘাড়ে, কপালে অল্প অল্প ঘামের চিহ্ন। মুখময় কিসের যেন একটা উত্তেজনা। 

বাবা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন...' আরে পাখার তলায় বসুন জগন্নাথ দা, ওখানে কেন ! হ্যাঁ গো, ঠান্ডা জলবাতাসা এনে দাও..জগন্নাথ দা এসেছেন... '

' না না ঠিক আছে। অত ব্যস্ত হতে হবে না। কিভাবে যে বলি, তাই ভেবে পাচ্ছি না...'

জেঠুর চোখে মুখে সলজ্জ হাসি। কথায় ইতস্তত ভাব। 

' কী হয়েছে দাদা ?'

' টিভিতে কালকে রবিবার দুপুরের সিনেমাটা দেখো..."লাল্টু বল্টু"...ছোটোদের খুব ভালো লাগবে...হুলো দেখিস কিন্তু... '

আমার সবাই না বুঝে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি জেঠুর মুখের দিকে। 

' তাহলে বলি...ওতে মানে, সিনেমাটাতে আমিও একটা বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছি...'

' তাই নাকি ?'

' এতদিন তো বলোনি জেঠু !'

আমি বিস্ময়ের সুরে বলে উঠি।

' বলবো কি রে ! এই তো সদ্য সদ্য বেরোলো ছবিটা...আমি নিজেই দেখে উঠতে পারিনি।'

' এমন একটা জায়গায় কি করে যোগাযোগ হলো দাদা ?'

বাবার চোখেমুখেও যেন আমারই মতো সমান কৌতুহল।

' হে হে..সে এক ইতিহাস বটে ! '

জলের গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়ে আনন্দ, উত্তেজনা আর চঞ্চলতায় কিছুট জল চলকে পড়ে জেঠুর খদ্দরের পাঞ্জাবীর বুকে। সেদিকে ভ্রূক্ষেপ মাত্র না করে বলে চলেন তিনি...' ঐ সিনেমার যে সহনায়ক, মানে ঐ বল্টু...ওরফে হীরক চন্দ্র মল্লিক, ওর বাপ জেঠারা আমার মায়ের দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হন...একই বংশের লতায় পাতায়..। একটা সময় ওদের বাগবাজারের বাড়িতে পূজার্চনায় বাবার হামেশাই ডাক পড়তো। তারপর সময় বদলে গেলে যা হয়...ও বাড়ির ছেলে হীরক এখন সিনেমায় নাম করেছে...বড় অভিনেতা...দিন পালটে গেছে... এখন ওরাও ডাকে না, আমরাও আর যাই না। মাস কয়েক আগে হঠাৎ করেই সে বাড়িতে যাওয়ার একটা সুযোগ আমার এসে গেল। ভাটপাড়ার প্রখ্যাত পন্ডিত ব্যক্তি প্রণবেশ ভট্টাচার্য ছিলেন বাবার আচার্যগুরু। তাঁর কাছেই বাবার মন্ত্র সাধনার হাতেখড়ি। প্রণবেশ পুত্র পন্ডিত নিখিলেশ ভট্টাচার্য, তিনিও একজন সিদ্ধ পুরুষ। ছয়ফুটের ওপর লম্বা, অন্তর্ভেদি দৃষ্টি, জটাজুটোধারী, পাকা আমের মতো গায়ের রঙ। পূর্বপরিচয়ের সূত্রে মাঝে মাঝে তাঁর কাছে আমি যাই।

প্রাণের আরাম আর মনের শান্তি দুটোই যেন ফিরে ফিরে পাই সেখানে গেলে, দুদন্ড কথা বললে। 

শেষ যে বার তাঁর কাছে আমি গিয়েছিলাম, আমায় বেশ উদ্বিগ্ন চিত্তে বললেন, " কলকাতায় কাল এক বাড়িতে শ্রাধ্যানুষ্ঠানের কাজ করতে যেতে হবে। আমার সহকারীটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার যাওয়া ঘোরতর অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুমি কি পারবে আমার সঙ্গে যেতে সেখানে ? "

" কলকাতার কোথায় গুরুদেব?"

" বাগবাজার.."

ঠিকানা শোনামাত্র আর বুঝতে বাকি রইলো না। একদিন যে বাড়িতে বাবা যেতেন প্রধান পুরোহিত হিসেবে, আজ আমি সেই বাড়িতেই যাচ্ছি সম্পূর্ণ অন্য এক পরিচয়ে। তবু গুরুদেবের কথা, ফেলবোই বা কেমন করে! রাজী হয়ে গেলাম। 

শ্রাদ্ধশান্তির পালা চুকিয়ে যখন ফিরে আসছি, হীরক আমায় একপাশে ডেকে বললো, " মামা, একটা প্রস্তাব ছিল। অন্য কাউকে তো চাইলেই বলা যায় না। আত্নীয়তার সম্পর্কের খাতিরেই বলছি..."

যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ওদের বাড়ির আগামী প্রজন্মের কাছে এই আত্নীয়তার সম্পর্কের সত্যিই আর কোনো মানে থাকবে কিনা জানি না। সেটা জানি না বলেই এ বাড়ির প্রতি জড়ানো আবেগটুকু সদ্য প্রয়াত কাকাবাবুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে মনের এক কোণে সঞ্চয় করে রেখেছিলাম। পুরোনো মানুষেরা এক এক করে সব হারিয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টির বাইরে চলে গেলে এখনই কেউ কারো খোঁজখবর রাখে না তো তখন! শুনলাম সিনেমা, ছবিপত্র করে হীরকের এখন বেশ নাম ডাক হয়েছে। হাজার হোক, নিজেদেরই তো জন৷ কোথাও একটা ক্ষীণ সুতোয় বাঁধা। সেখানে দাঁড়িয়ে ওর এই কথাটুকু শুনে ভালো যেমন লাগলো, কৌতুহলও হলো৷ 

জিজ্ঞাসু চোখে তাকালাম। সে আমায় বললো, " একটা সিনেমার শুটিং চলছে মামা। পরিচালক আশিস সিনহার ছবি..." লাল্টু বল্টু"...ছোটোদের জন্য তৈরি...আমি সেখানে বল্টুর চরিত্রটা করছি। সহনায়কের পাট।'

শুরুতেই ঠোক্কর খেলাম। ব্যাটাচ্ছেলে পর্দায় অভিনয় করে শুনেছি...কবে যে নায়ক হয়ে গেল, এ তো জানা ছিল না! কটা সিনেমাই বা দেখেছি জীবনে! এখন বয়স হয়েছে, সন্ধ্যেটা কাটাতে মায়ে পোয়ে টিভির সামনে খানিক বসে থাকা..ঐ আর কি...কি যে দেখি ছাই মনেও থাকে না...তবে কি জানো, অনেক ছোটোবেলার একটা ঘটনা...সে ঘটনার সঙ্গে আজকের সময়ের কতটা কি যোগসূত্র আছে আমি জানি না, তবে ঐ যে কথায় বলে না, কারণে অকারণে ছোটোবেলা ঠিক ফিরে ফিরে আসে, কাকতালীয় ভাবেই আসে...!

তখন কত বয়স ঠিক খেয়াল নেই। শ্রী লক্ষী সিনেমা হলটা নতুন তৈরি হয়েছে। ধারেকাছে তখন আর কোথাও কোনো প্রেক্ষাগৃহ হয়ে ওঠে নি। 

একদিন বাবার হাত ধরে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করে নজর পড়াতে তাকিয়ে দেখি সিনেমা হলের মোটা মোটা থামওয়ালা দেওয়ালের গায়ে অনেকখানি উঁচুতে একটা বিরাট বড়সড় রঙচঙে ছবি আঁকা পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। গাছপালা, কুঁড়েঘর, মাঠ, দূরে কাশবন, নীল আকাশ...দুটো বাচ্চা বাচ্চা ছেলে সেই কাশবনের পথ ধরে ছুটতে ছুটতে আসছে...এইরকমই ছিল ছবিটা...তার নীচে বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা... " দুই ভাইয়ের গল্প নিয়ে তৈরি ছোটোদের জন্য সাড়া জাগানো ছবি লাল্টু বল্টু.."

সিনেমা হলের সামনেকার চৌহদ্দিটাকে ঝলমলে কাগজ আর রঙীন কাপড়ের মোড়কে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। অনেক লোকও হয়েছে সেখানে। 

যাবার পথে পাশ থেকে কে একটা বাবাকে বললো, "আজ প্রেক্ষাগৃহের শুভ উন্মোচন..."

খানিক দাঁড়িয়ে পড়লেন বাবা। আমি তাকিয়ে আছি। আমার মতো তাকিয়ে আছে আরো অনেকেই। চলতে ফিরতে কম বেশি সবারই নজর যেন একবার করে হলেও ছুঁয়ে যাচ্ছে পোস্টার ঘিরে। হবে নাই বা কেন। সে পোস্টার এতটাই পেল্লায়, বাবার মতো লম্বা মানুষটাকেও যে ছাড়িয়ে যায়...! 

জীবনে সেই প্রথম অন্য রকম চোখ দিয়ে সিনেমা দেখা...!

কে অভিনেতা, কে পরিচালক, কে কি কিচ্ছু মনে নেই...শুধু ঐ গায়ে আঁকা দৃশ্যপট আর লাল অক্ষরে নামটুকু কি করে যেন এখনো ভেতরকার পৃথিবীতে গাঁথা হয়ে আছে..!

হয়তো নাড়াচাড়া না করলে হদিশও পেতাম না সে ছবির...

আজ এত বছর পর বাগবাজারের বাড়িতে দাঁড়িয়ে কি মনে হলো জানো ? মনে হলো, সেদিনের ঐ ছবিটুকুই যেন স্পটলাইটের আলো হয়ে হীরক, মানে আমার ভাগ্নের চারপাশে হীরের মতো জ্বলজ্বল করছে এদিক ওদিক....! হয়তো শেষমেশ দুটো সিনেমাকে কখনই এক করা যাবে না। না ই চিনলাম আশিস সিনহাকে। তবু কি অদ্ভুত একটা টান! একাল আর সেকাল। মাঝখানে ছোট্ট দুটো শব্দ... "লাল্টু বল্টু".... কি অদ্ভুত রকম নস্টালজিক ! 

ভাগ্নে আমার চোখ বড় বড় করে বললো, " ঐ যাঃ, আশিস দার নামই শোনোনি? আচ্ছা বেশ, শুনে কাজ নেই..."

এরপর যেটা বললো, তা শুনে তো আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম! এ যে নস্টালজিয়ারও ঊর্ধ্বে...! 

বললো, "ঐ ছবিতে একটা রোল আছে। পুরোহিত মশাই বিয়ের বাসরে মন্ত্র পড়ছেন। পাট খুব ছোট। কিন্তু জিনিসটা ফুটিয়ে তুলতে হবে। সেরকম একজন লোক চাই...কথায় কথায় ডিরেক্টর বলছিলেন আমায়। আজ তোমাকে দেখে হট করে আমার ভদ্রলোকের কথাটা মনে পড়ে গেল। তুমি যদি রাজী থাকো তাহলে আমি তোমার কথা বলতে পারি। তেমন পারিশ্রমিকও মনে হয় দিতে পারবে না। ঐটুকু রোলের জন্য কি আর দেবে। আশিস দার ছবিতে চিলতে জমিটুকুই অনেক। ছাপ রাখতে পারলে পরবর্তী কালে আরো কাজের অফার...তাহলে মামা..."

বেজায় খুশি মনে জগন্নাথ জেঠু বললেন, ' ভাগ্নের কথায় রাজী হয়ে গেলাম বুঝলে হে ধীরাজ... না আছে কস্মিনকালে কখনো যাত্রা, থিয়েটার, নাটক পালা করার অভিজ্ঞতা, না আছে স্পটলাইটের মুখের সামনে এক খন্ড দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা...অনেক কাল আগে একবার বাদাবনের দিকে কোন্ এক গেরো মাতালের চরিত্রে একজনকে অভিনয় করতে দেখেছিলাম...আশু ভট্টাচার্য্যের বাড়িতে তখন নিত্য পুজা করতাম...ফিরে আসার পথে ভীড় দেখে দাঁড়িয়ে পড়াতে তালগাছের সারির ফাঁকে দেখি ঐ দৃশ্য...বোধহয় সিনেমার শুটিং...পাশ থেকে কে একজন বলেছিল, " কত কসরত করলে তবে এই মোদোমাতালের চরিত্র...এলেম ছাড়া এমন পাট করা যায় না..."

সেকথা মনে করে চাইলেই হয়তো পিছিয়ে আসতে পারতাম, কিন্তু ঐ মনটাই আমায় আটকে দিল। ভাবলাম, পিতৃদেবের আশীর্বাদে আজ আমার যেটুকু আছে, তা ই বা কজনের থাকে ! ভান্ডারে এই সঞ্চিত আছেটুকু...এ তো আমার নিত্যদিনের রিহার্সাল ! দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে চাওয়া...ইহজীবনে এর চেয়ে কসরত আর কি হতে পারে ? সারাজীবন যজমানী করে কাটিয়ে দিনের শেষে ঐ অভিনয়টুকু করতে পারবো না ! এর চাইতে চ্যালেঞ্জিং কাজই বা আর কি হতে পারে ! মাস দুই আগে শুটিংও করে এলাম। সেই ছবিই কাল টিভিতে...তাই ভাবলাম যাই, পাড়ায় একটু খবরটা দিয়ে আসি...এই তোমাদেরই প্রথম বললাম...আচ্ছা আসি তাহলে...'


পরদিন দুপুর বেলা তাড়াতাড়ি কাজকর্ম সেরে বাড়ি শুদ্ধ সকলে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে রয়েছি টিভির দিকে। না জানি আজ কি একটা ঘটতে চলেছে ! 

সময় যত এগোতে থাকে ততই যেন অধৈর্য হয়ে উঠি ভেতর ভেতর...

 কই, জগন্নাথ জেঠুর মুখ কিংবা কোনো অবয়বই তো এখনো অবধি কোথাও দেখতে পেলাম না! 

' ও বাবা, জেঠু কোথায় ?'

বাবা পাশ থেকে বলেন, ' দ্যাখ না, এবার হয়তো আসবে...ঐ, ঐ তো একটা বিয়েবাড়ি দেখাচ্ছে...দ্যাখ দ্যাখ ভালো করে দ্যাখ, ফসকে না যায়...!'

চোখ বড় বড় করে গরু খোঁজার মতো খুঁজেও জগন্নাথ জেঠুর কোনো হদিশ কোত্থাও পেলাম না। দেখতে দেখতে সিনেমার অবশিষ্ট সিকিভাগ চলে গিয়ে একসময় অপেক্ষা করার মতো আর কিছুই রইলো না। 


পরের দিন সকাল বেলা ইস্কুলে যাবার পথে সাইকেলটা থামিয়ে বলতে গেলে এই প্রথম জগন্নাথ জেঠুর বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলাম একটা অন্যরকম আবেগে।  

সদর দরজার চৌকাঠে পা রেখেছি, দেখি বারান্দার তুলসি মঞ্চের সামনে গেরুয়া বসন পরে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র জপতে জপতে কমন্ডলু করে গাছে জল দিচ্ছেন জেঠু। 

চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। 

আমায় দেখে ঘাড় ফেরালেন জেঠু। সেই একগাল হাসি। বেশ খানিকটা অবাকও। 

' আমাদের হুলো বাবু যে! এত সকালে? আয় আয় ভেতরে আয়...'

সসংকোচে এদিক ওদিক তাকাই...' ঠাকুমা কোথায় জেঠু ?'

' মা দোতলায় আহ্নিক করছে। ওমা, দাঁড়িয়ে রইলি কেন ? আয়।'

গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে খানিক ইতস্তত করে বলি...' কাল তো টিভিতে দেখতে পেলাম না তোমায়...কত খুঁজলাম!'

কিছু না বলে ফ্যালফ্যাল করে আমার মুখের দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে রইলেন তিনি। মাথাটা আস্তে আস্তে নীচু হয়ে আসে তাঁর। অতি ধীর কন্ঠে বলেন, ' নারে, শেষমেশ কেটেই দিল। হয়তো ওটুকু দৃশ্য রাখতেই ভুলে গেছে।'

কি আর বলি। চুপ করে রইলাম। 

জেঠু আমার গায়ে হাত রেখে বললেন, 'হুলো বাবা, দুপুরে খেলতে আসিস কিন্তু...কুলের আচার নিয়ে যাস...ভাগ্নের সিনেমা বলে কথা, সেখানে আবার আমায় ছবির পর্দায় দেখবে,তাই শুনে তোর ঠাকুমা আনন্দে দুই বোয়াম আচার বানিয়ে রেখেছিল...তোরা না এলে কষ্ট পাবে...'

মাথাটা কেন জানি না আমারো নীচু হয়ে আসে। 

ভেবেছিলাম সেই গোপন ইচ্ছের কথাটা পাড়বো...'হীরক মল্লিকের সঙ্গে একবার একটু দেখা করার সুযোগ করিয়ে দেবে জেঠু ?'

পারলাম না বলতে। মন থেকে কথাটা এলোনা, নাকি বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না জানি না। 

সেদিনের পর বলার মতো পরিস্থিতি জীবনে যে আর কখনো আসে নি এমনটাও নয়। কিন্তু ঐ আসাটুকুই। 

ইষ্টনাম জপতে জপতে জগন্নাথ জেঠু একদিন ইহলোকের মায়া কাটিয়ে স্বর্গলোকে যাত্রা করেন। 'বল্টু'র পৃথিবী থেকে দূরে, আরো দূরে হয়তো বা অন্য কোথাও...অন্য এক স্পর্শের মাঝে বেঁচে থাকে অভিনেতা। ঝাপসা হতে হতে জীবনের কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় অপ্রকাশিত কথাটুকু। 


বহু সময় কেটে গেছে। জগন্নাথ জেঠু গত হয়েছেন নেই নেই করে বছর পনেরো হয়ে গেল। ঠাকুমা তারও আগে। ঠিক কত আগে সে আর মনে নেই। 

শুনেছি, দথু পিসিমার ছেলেপুলেদের সঙ্গে পড়ে থাকা ভিটেমাটির বন্দোবস্ত নিয়ে কোন্ এক প্রোমোটারের নাকি কথাবার্তা চলছে। অবশিষ্ট আইনি জটিলতা মিটে গেলেই কাজে হাত দেবে ওরা। 

ভুলে যাওয়ার পৃথিবীতে হয়তো আরো কিছুকাল রয়ে যাবে বিবর্ণপ্রায় ফাটলধরা চিরনবীন সে দেওয়ালের গায়ে আঁকা ক্যাম্বিস বলের আজন্মলালিত ছাপগুলো।

বাবা আফশোস করে বলেন, ' এ ভিটের মূল্য ছোট চক্কোত্তি আর দেখে যেতে পারলেন না !' 


শুভাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

ব্যক্তিজীবনে ইতিহাসের শিক্ষক। গল্প লিখতে ভালোবাসেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কলমে বিগত শতাব্দীতে ফেলে আসা বাঙালি জীবনের কথা ভারি যত্নে ফুটে ওঠে।


1 comment:

  1. ছাপ গল্পটা পড়লাম। নিজের ছেলেবেলার চিত্রটা ভেসে এলো মনের আঙিনায়। সেই সময়ের সাথে হারিয়ে গেলাম। মনে মনে নিজেকে বসিয়ে টাইম মেশিনে চড়ে ঘুরে এলাম আবার।
    ভালো লাগা একরাশ।

    ReplyDelete

প্রকাশিত পর্ব

ঊনবিংশ সংখ্যা ।। ২১সেপ্টেম্বর।। নরকের প্রেমকাহিনী ।। তন্ময় ধর

নরকের প্রেমকাহিনী     তন্ময় ধর  'নরক !! না না, এমন নামের ছেলের সাথে কিছুতেই তোমার বিয়ে হতে পারে না' কমল মিত্রসুলভ স্বর, দৃষ্টি ও আভি...