Wednesday 25 May 2022

সংখ্যা ২ ।। ২৫ মে ২০২২ ।। মধ্যবর্তিনী ।। শুভশ্রী সাহা

মধ্যবর্তিনী 

শুভশ্রী সাহা 


আজকাল বারান্দার ধারের জবা ফুল গাছটায় এই শীতেও ঝাঁপিয়ে ফুল আসছে। মঞ্জরী সেদিকে তাকিয়ে থাকল অন্যমনস্ক হয়ে। শীতের মিঠে রোদ বারান্দায় ছড়িয়েছে, বাতাসে এখনো হিমের গন্ধ। মঞ্জরী গায়ের শালটা জড়িয়ে নিল ভালো করে। 

মা আ, --- ছেলের গলা, অনিকেত ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল। মঞ্জরী সামান্য চোখ তুলল। ছেলেটা তাড়াতাড়ি লম্বা হয়ে গেছে বড়। অবিকল বাপের ছাপ বসানো শরীরে।

--- কী?

-- চেতনদা ওই টু-হুইলারের শোরুমটা নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চায়। চেতনদাই সাজিয়ে ফাজিয়ে পুরোটা করে দেবে! 

--- আবার শোরুম! এখন ব্যবসা পত্তর মন্দ চলছে বুবাই, যা আছে সেগুলো তো চালাতে হবে আগে! মঞ্জরীর মুখে বিরক্তি নেমে এলো! 

-- , তুমিও পারো বটে মা! তোমার টাকায় খায় কে! তোমাদের তো রানিং ব্যবসা সব! ছুটছে! 

ডিস্ট্রিবিউটারশিপ নিয়ে নিয়েই তো লাল হয়ে গেলে তোমরা! 

মঞ্জরীর চোয়াল শক্ত হলো, ---লাল কী নীল সব তো উপর থেকে বোঝা যায় না! আর তোর সাইবার কাফেটা কী একেবারে গোল্লায় চলে গেছে! আবার শোরুমের চিন্তা! 

-- গোল্লায় যাবে কেন! সামান্য ঝাঁঝালো অনিকেত। এটা আমার ড্রিম প্রোজেক্ট! দাদুর এই জমিটাতো ফালতু পড়েই রয়েছে হাইওয়ের ধারে! রিয়েলি মা! 

-- জমিগুলো কী ভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হয় সেটা যদি জানতিস ! যাকগে, এখন নয় , সামনের মাসে চেতনকে আসতে বল! মঞ্জরী চোখে চশমা পরলো। যেন কিছু পড়বে। 

ঈঙ্গিতটা স্পষ্ট। অনিকেত নিজের ঘরে চলে গেল।  

মঞ্জরী চশমাটা খুলে ফেলল। অদ্ভুত! সে যেন টাকা ছাপানোর মেশিন। কী ভাবে এই ছোট জায়গায় ব্যবসাগুলো সে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই জানে। ডিস্ট্রিবিউটারশিপগুলো বাকিগুলোকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দিবানাথ আছে বলে রক্ষা! নইলে কবেই পার্টির গর্ভে সব চালান হয়ে যেত। ভারী নিঃশ্বাস ফেলল মঞ্জরী।

দিদি, ঘরের ভেতর মুখ বাড়ালো হেনা, চা এনেছি --

-- দে

-- কী বিস্কুট দেব? ক্রীমকেকার খাবে?

-- দে না যা হোক একটা কিছু ! মঞ্জরীর বিক্ষিপ্ত কন্ঠস্বর শুনে অবাক হলো হেনা।

-- বুবাইকে সেই লোকটা আবার ফোন টোন করছে বুঝলে দিদি! মুখ থেকে বেরিয়ে গেল হেনার কথাটা! 

মঞ্জরী চমকে উঠল, একটা দাগী লোকের সাথে তার ছেলে কেন কথা বলে! কী চায় কী! 

--তোর দাদা কোথায় রে? 

দাদার অফিস ঘরে লোক এসেছে। 

--- ওহ! তাহলে ওখানেও চা পাঠিয়ে দিস। 

--মিঠু ঘুম থেকে উঠেছে? কলেজ নেই আজ?

--কিছু বলেনি তো বেরোবে । দেখছি। 

হেনা বেরিয়ে যেতেই মঞ্জরী ফোনের দিকে হাত বাড়ালো।

-- হ্যালো, উদয়?

-- বলুন বউদি,  

-- বলছি অসীম বিশ্বাস তো আবার ঘোরাফেরা করছে বুবাইয়ের চারপাশে। 

-- জানি বউদি!

--- জানো! তুমি কী করে জানলে!

-- দাদা প্রায় পনেরোদিন হয়ে গেল আমাকে খেয়াল রাখতে বলেছে!

-- ওহ! 

-- চিন্তা করবেন না বউদি। আমি সামলে নেবো। 

মঞ্জরী অস্ফুটে বলল, ঠিক আছে। 

দিবানাথ যদি জানে যদি ওকে বলেনি কেন! 

এই লোকটা ছুরি মারতে গেছিল মঞ্জরীকে, কিন্তু মঞ্জরীকে বাঁচাতে গিয়ে সেই ছুরি পড়েছিল দিবানাথের পেটে । থানা পুলিশ আদালত হাজত কম হয়নি। ব্যবসার জেরে খুনের চেষ্টা বললেও, কেউ কেউ বলে অসীম বিশ্বাস, নাকি হেমনাথেরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। এই দাগী লোকটা বেশ কিছু আগে ছাড়া পেয়ে অনিকেতের আশে পাশে ঘোরাফেরা শুরু করেছিল, তারপর উধাও, এইবার আবার ফিরে সেই এক খেলা শুরু করেছে। কী বলতে চায় সে, অনিকেতকে? তার বাবার কথা, মঞ্জরীর কথা? দিবানাথের বিরুদ্ধে সে কী অনিকেতকে দাঁড় করাবে! এই জন্যই কী অনিকেত আজকাল দিবানাথকে ঠিক মানতে চায় না? কিন্তু দিবানাথ না থাকলে সেকী ছেলের জীবন ফিরে পেত নাকি! অনিকেত তো কত কিছুই জানে না। হেমনাথ আর দিবানাথের মাঝে মঞ্জরীর নিজের কথা চাপা পড়ে আছে কতকাল!

  দিবানাথ তার স্বামী হেমনাথের খুড়তুতো ভাই। হেমনাথ চলে যেতে দিবানাথ পাশে না এসে দাঁড়ালে মঞ্জরী খুব বিপাকে পড়ে যেত। অবশ্য মারা যাবার আগে থেকেই দিবানাথ আর মঞ্জরীই সব সামলেছে ব্যবসা পত্তর। খড়িবেড়ের চারপাশ দ্রুত বদলে যাচ্ছিল তখন। তার শ্বশুরের তৈরি করা জোত জমি, দোকানঘর, ভেড়ি, ইটভাঁটা সবই ছিল কিন্তু মঞ্জরীর স্বামী হেমনাথ নিজেই এক অদ্ভুত প্রাণি ছিল সংসারে। ছেলে-মেয়ে স্ত্রী বা বাবা সবাই যেন তার কাছে ভিন গ্রহের লোক। ভালোবাসত হয়তো, কিন্তু নিজের চারপাশে দেওয়াল তুলে রাখতো সবসময়। অদ্ভুত এক শীতলতা ছিল চরিত্রে। মঞ্জরী দেখতে দেখতে নিজেও শীতল হয়ে গেছিল একসময়। সহবাস করলেই কী দাম্পত্য হয় নাকি!

 মঞ্জরীর ছেলে মেয়ে হবার সময়ও হেমনাথ বেপাত্তা! তার শ্বশুর আর এই দিবানাথ, সব সামলেছে। মঞ্জরী ছেলে হবার বেলায় মরতে বসেছিল প্রায়। রক্ত জোগাড় করে আনতে বললে হেমনাথ পালিয়ে গেছিল নার্সিংহোম থেকে। দিবানাথ সব করেছিল। নইলে, সে আর তার ছেলে ফিরতো নাকি বেঁচে! ---- সবাই জানেও।

 কয়েকদিন পর অজ গ্রামের ভেতর থেকে হেমনাথকে ধরে নিয়ে আসে তার ভাই। শ্বশুর ধরে মারতে বাকি রেখেছিল। ফিরে আসার পরও নাকি জানতে চায়নি মঞ্জরী কেমন আছে বা বাচ্ছাটা কেমন, কী বৃত্তান্ত।---এই অসহ দাম্পত্য নিয়েই তাকে চলতে হবে দেখে মঞ্জরী আর ঘোমটার আড়ালে থাকেনি। শ্বশুরের সঙ্গে সঙ্গে থেকে সব সে নিজেই হাতে তুলে নেয়! হেমনাথের হাতে পড়লে তার আর ছেলেমেয়ে দুটোর ভাত জুটতো না। 

তার ছেলেমেয়েরা অবশ্য, বিশেষ করে মেয়েটা, মিঠু , বাবা বলতে দিবানাথকেই জানে। বাবা তার প্রাণ। মেয়ে হবার চারদিন বাদে ফিরেছিল হেমনাথ। শ্বশুর বাড়ি ঢুকতে দিতে চাননি রাগে। মঞ্জরীই আঁতুড় থেকে উঠে এসে শ্বশুরকে মানিয়েছিল।

অন্দর সামলেছে দিবানাথের মা শিবানী। তার উপায় কী। বিধবা হয়ে ইস্তক ছেলে নিয়ে জেঠতুতো ভাসুরের সংসারে। ভাসুর ভাদ্রবউকে বিছানায় নিতো, আর এই জন্যেই নাকি হেমনাথ এমন পাগলপানা, ঘোরতর অসহ দাম্পত্য যাপন করেছে! --- মাতৃহীন পুত্র, বাবার এই অবৈধ সম্পর্ক! কোনো মেয়েমানুষকেই আর বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসতে পারেনি। অথচ কী সুভদ্র মানুষ ছিল! 

অবশ্য এ সব মঞ্জরীর ঝি-চাকরের মুখের কথায় শোনা। বিয়ের পর পুরোনো লোকেরা বলেছিল। 

 কে জানে কী সত্যি! তবে মঞ্জরী দেখেছে শিবানী যা বলতেন শ্বশুর সেটাই মানতেন। হেমনাথের থেকে দিবানাথের আধিপত্য ছিল বরাবর বেশি । শ্বাশুড়ি কবেই তো গত হয়েছিলেন। হেমনাথ শিবানীর কাছেই মানুষ হলেও তাকে পছন্দ করতো না বিশেষ।

-- আজ দোকানে যাবে না? ঘরের বাইরে থেকে দিবানাথ জানতে চাইলো। 

মঞ্জরী তাদের এল পি জি গ্যাসের অফিসে বসে। সেখান থেকেই বাকি সব চালায়। কর্মঠ মহিলা, ভোল পালটে ফেলেছে পুরোনো ব্যবসার। কিন্তু একটাই মঞ্জরী আবেগহীন নারী। 

 দিবানাথ মঞ্জরীকে দেখছিল। সামান্য পুরুষালী গঠনের মঞ্জরী লম্বা একহারা চেহারা। চিবুকের হাড় সামান্য উঁচু নিটোল কপাল। ঘসেমেজেও ফর্সা বলা যায় না। শ্যামলাই, বরং তার মুখশ্রী বেশ সুন্দর। কাটা কাটা। দীর্ঘ চুল তবে ঘন নয় খুব। কিন্তু সারা শরীর জুড়ে এক অদ্ভুত দৃঢ়তার ছাপ স্পষ্ট।

-- যাবো। তুমি ভেতরে এসো। 

-- জানি, কী বলবে তুমি!

-- তুমি জানলে কী করে, তাও এতদিন আগে থেকে! 

দিবানাথ হাসলো, --- জানতে হয়। ছেলেপুলে মানুষ করতে গেলে খোঁজ রাখতে হয় বইকি! বেশ মাস দুয়েক আগে থেকেই এ-ই লোকটা বুবাইয়ের সঙ্গে ঘুরছে। তুমি ব্যস্ত দেখে কিছু বলিনি আর। আজকাল সামান্য কারণে তুমি বড় টেনশন করে ফেলছ।

----সামান্য কারণ? জানো ওই জায়গাটায় আমার পেট্রোল পাম্পের জন্য আপ্লাই করা আছে কবে থেকে! হাইওয়ে বলে হয়ত হয়েও যাবে। ব্যাঙ্ক লোন পেলেই করে নিতে হবে। এ-ই চারপাশের ছোট জায়গায় কোনো পেট্রল পাম্প নেই। চালু বিজনেস! 

-- চালু বিজনেস! বুবাইকে বলতে পারবে? দিবানাথ এখনো মঞ্জরীকে নাম ধরে ডাকতে পারে না। সে আর মঞ্জরী দুমাসের ছোট বড়। মঞ্জরীই বড় দু মাসের। 

মঞ্জরী দিবানাথের দিকে স্পষ্ট করে তাকালো। দাদার পুরো বিপরীত চেহারা মিল নেই। হাট্টা কাট্টা লম্বা, সামান্য স্থুলতার দিকেই পড়ে এখন। রঙ চাপা। সারা মুখশ্রীতে একটু ক্রূরতার ছাপ। সেটা অবশ্য ইদানীং এ-র। ওর কাজটাও তাই। প্রমোটারি, নেতা-টেতাদের মাঝের সমস্যা মেটানো। মিডিলম্যান হয়ে ব্যবসা, রাজনীতি দুয়ের মাঝে বসে থাকা। তাই জন্যই মঞ্জরীকে কেউ ঘাঁটায় না আর। সাহস পায় না। অনেক কাল আগে তার শ্বশুরের বাজারের উপর চালু লোহার দোকানটা বাঁচাতে গিয়ে ছুরি খেয়েছিল দিবানাথ। মঞ্জরীর মরার কথা ছিল সেদিন, ওকে বাঁচাতে গিয়ে ই দিবানাথের পেট ফুটো হয়েছিল। অনেক কষ্টে বেঁচেছে। এই লোক তাকে, ছেলেকে মেয়েকে সব দশ হাত দিয়ে আগলে রেখেছে ! বুবাই আজকাল ওকে তাচ্ছিল্য করে, বেশ বুঝতে পারে মঞ্জরী। --- তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল অজান্তেই।

-- এখন কিছুই বলো না প্লিজ। একটু ধৈর্য ধরো। লোকটা ফালতু, আমি সামলে নেব ঠিক। এ-ই বয়েসে একটু আধটু অবুঝ সবাই হয়। দিবানাথ গলা নামালো।

-- সামলাতে পারলে তো ভালো দিবু ! নাহলে আমাকেই সামলাতে হবে কড়া করে। 

দিবানাথ হেসে ফেলল। তার চোখ পড়ল মঞ্জরীর পায়ের পাতার দিকে।

-- একি! এটা কী করে হলো!  

-- কিছু না। সামান্য তেল পড়ে গেছিল। 

-- তেল! পড়ে কী করে, এরা, এতগুলো কাজের মানুষ কী করে সবাই! দিবানাথ মঞ্জরীর পায়ের পাতায় হাত দিতে যেতেই মঞ্জরী পা গুটিয়ে নিলো। দিবানাথ ও অপ্রস্তুত হয়ে হাত সরিয়ে নিল। 

-- ফোস্কা শুকোচ্ছে না? সুগারটাও তো অনেক দিন মাপানো হয় নি। 

আজ ফোন করে দিচ্ছি। বিজন এসে ব্লাড নিয়ে যাক কাল।

-- ধুর! সামান্য একটা ফোসকা! সুগার ঠিক আছে! 

-- তুমি বললেই সবসময় সব ঠিক না! 

মঞ্জরী সামান্য হাসল। সে স্বভাব গম্ভীর। দিবানাথ চেনে বোধহয় সবচেয়ে বেশি।  

আর একজন কী চিনতো তেমন! অসহবাসের দাম্পত্যে! চিনতো না, চায়ও নি। ধরাই দেয়নি কোনদিন, কারুর কাছে, তবু তার জন্যেই মঞ্জরীর খর চোখও জ্বালা করর। উপেক্ষার তীব্র কষ্ট দানা বাঁধে গলায় এখনো। সে তো কিছু ছিনিয়ে নেয় নি! বেঁধে রেখেছে বরং। তবু চলে গেল কেন! আজ মেয়ের বয়স ধরে সে কুড়ি বছর নিখোঁজ।--- কিন্তু সবাই জানে মারা গেছে হেমনাথ, তারা দুজন বিবাহিত।

দিবানাথ নিচে নেমে এলো। রান্নাঘরের ভেতরে হেনা একা। দিবানাথকে দেখেই তার গায়ের কাছ ঘেঁসে দাঁড়ালো। খোলা কোমর থেকে উন্মুক্ত নাভি দেখা যাচ্ছে অনেকটা।

--লুচি খাবে? করে দেব? না চাওমিন? হেনার গলা তরল করে হাসলো। 

 দিদি কী বলল? রেগে আছে না বুবাইয়ের উপর? 

-- দিবানাথ অন্যমনস্ক হলো--- 

 কাল সুগারটা দেখে নিতে হবে । তোমার দিদি ওষুধ খাচ্ছে না ঠিকমতো। ফোসকা পড়ল কী করে! 

তেল টেল ওর নাড়াচাড়ার কী দরকার। তুমি কী করো! 

হেনার কোমর থেকে চোখ সরিয়ে নিল দিবানাথ, হেনাও সরে গেল।

-- যা হোক কিছু একটা করে দাও আমি বেরোব। --- দিদিকে কি তুমি বুবাইয়ের ব্যাপারে বলেছিলে হেনা! ঠান্ডা দৃষ্টি দিবানাথের।

হেনা বিবর্ণ হয়ে গেল ভয়ে। এই দিবানাথ তার অজানা নয়! 

--- আমি বুঝতে পারিনি যে দিদি জানে না! 

দিবানাথের চোয়াল শক্ত হল, ---আমি কিন্তু দিদিকে বিরক্ত করা পছন্দ করি না, জানো তো! আর বলবে না! ব্যবসাতে এমনিতেই চাপ থাকে ওর। প্রেশার বেড়ে যাবে! 

হেনা মাথা নিচু করে নিল।

দিবাকর বারান্দায় এলো। মঞ্জরী চান করছে দোতলায়। রোদ পড়ে ওর শরীর ছুঁয়ে সাবান জল গড়িয়ে আসছে, চিকচিক করছে বাথরুমের নর্দমায়। 

দিবাকর লম্বা করে নিঃশ্বাস নিল।। আহ! মঞ্জরীর সুগন্ধ, একজন চারপাশ জুড়ে। সহবাস নেই, তবু জুড়ে আছে সবটুকু নিয়ে।



শুভশ্রী সাহা।
 ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে-- গল্প, কবিতা, মুক্ত গদ্য এবং প্রবন্ধ। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'আমি সে ও সখা' (যৌথ)। একক গ্রন্থ মুক্তগদ্য - 'ফেরিঘাটে একা'। 'মায়াগাছ' ( অণু গল্প সংকলন,বইমেলা ২০২২)







Wednesday 18 May 2022

সংখ্যা ১।। ১৮ মে ২০২২ //লাল ঘোড়া দিলীপ কুমার ঘোষ

 লাল ঘোড়া

দিলীপ কুমার ঘোষ 



 

     শীতকালটাতেই যা একটু অসুবিধে। তা-ও মাত্তর হাতে গোনা তিন মাস--- অঘ্ঘান, পোষ, মাঘ। অবিশ্যি কাত্তিকের শেষে কালীপুজোর পর থেকেই শীত শীত একটা ভাব মালুম হতে আরম্ভ করে। বছরের বাকি সময় ঝুঁঝরো হওয়ার আগেই ---ভোর থাকতে থাকতেপরেশের ঘুম ভেঙে যায়। মাঘের ভরা জারেও তার ঘুম হয়তো ভাঙে কিন্তু উঠতে বড় কষ্ট! বাতের ব্যথাটাও এবার বেড়েছে ক'দিন। না'লে এই সত্তুরেও সে দিব্বি রয়েছে--- অসুখ-বিসুখের কোনও বালাই নেই। বাতও ছিল না,গেলো শীত থেকে ধরেছে।


 
খোকা ভোরবেলাতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাবে। রাতে খেতে খেতে খোকা বৌমাকে বলছিল। 'ছাব্বিশে জানুয়ারি', 'সকাল সাতটায় অনুষ্ঠান', 'ভোর পাঁচটায় বেরোতে হবে'--- এমন টুকরো-টাকরা ভেসে আসা কথা সে কান পেতে শুনেছে। অত ভোরে খোকা কোথা যাবে, কেন যাবে তার খুব জানতে ইচ্ছা করেছে। কিন্তু সে-ইচ্ছা সে চেপে গেছে।
 খোকা যদি ভোরবেলায় বেরোয় তাকে উঠতে হবে রাত থাকতে থাকতেই। দু'ঘন্টা সময় তার লাগবেই। তার কমে সে কিছুতেই পেরে উঠবে না। সে খুব মেটো--- সব কাজে তার দেরি। আসলে সব কাজই সে খুব যত্ন ক'রে করে। তা সে গরুর জন্য কলাগাছ কুঁচোনোই হোক বা খড় কাটা। এমনকি সে যখন মাঠ থেকে ঘাস নিড়িয়ে আনে, সেই নিড়োনো জায়গাটায় একটা কুটি পর্যন্ত পড়ে থাকে না--- মনে হয় গরুতে যেন খুঁটিয়ে খেয়েছে। এর দাম যে সে একদম পায়নি তা নয়। হাটে তার নিয়ে যাওয়া ফসল আগে বিককিরি হত--- একটু বেশি দামেই। বাজরায় সাজানো, মোলাম করে পোষ্কার করা তার সব্জির রূপই আলাদা। সে ওলই হোক বা কচু-মান-মুলো।
 রাতে ভাল ঘুম-ই হল না। বার বার ঘুম ভাঙল। ঘুম ভাঙলেই সে বড় দেলঘড়িটায় টচের লাইট মেরে ঠাওর করার চেষ্টা করছিল ক'টা বাজে। আলোয় জোর নেই, ব্যাটারি ফুরিয়ে এসেছে। ব্যাটারির-ই বা আর দোষ কী! লাগিয়েছে সেই কালীপুজোর সময়। দু'মাস হয়ে গেল। ন্যাতানো আলোতেই একবার দেখল একটা বেজে গেছে। আর একবার দেখল দু'টোও বাজেনি। লেপের তলা থেকে সে ধীরে ধীরে কষ্ট করে বেরোল। শীতে হুনমান টুপি পরে শোয় সে। গায়ে চাদরটা ভাল করে জড়িয়ে নিয়ে টচ হাতে কলতলায় গেল। পেচ্ছাপে বসল। বসে আছে তো বসেই আছে। আজকাল পেচ্ছাপ হতে বড় দেরি। একটু করে হয়, বেশ খানিকখন হয় না। ফের এক ফোঁটা-দু'ফোঁটা। শেষমেশ সে উঠে পড়ল। কলটা বার দশেক টেনে বরফের মতো ঠাণ্ডা জলটা বের করে দিয়ে, দু'ঘোঁট জল খেয়ে সে ঘরের দিকে পা বাড়াল। আচমকা তার চোখ চলে গেল উঠোনে রাখা গাড়িটার দিকে। মনে হল একটা লাল রঙের ঘোড়া চাঁদের আলোয় ভাসছে! কাল সবে পুন্নুমে গেছে। চাঁদের আলোয় সব কেমন অন্য রকম লাগছে আজ। কাল ভোরে এমন চাঁদের আলো ছিল না। মরা আলো ঘন কো'শায় ঢেকে গেছল। আজও মনে হয় কো'শা আসবে। একটা হালকা সাদা চাদর যেন কেউ এরইমধ্যে মেলে দিয়েছে। তার মাঝেই রুপোলি আলো গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে আছে লাল গাড়িটা। হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল পরেশের। বুকটা কেমন হু হু করে উঠল।
 গেটের বাইরের আলো মানুষ-সমান পাঁচিল দেয়া কলতলার মধ্যে আসে না। তবুও পেচ্ছাপ করতে উঠে সে আলো জ্বালেনি। খোকার বিয়ের আগে ডান চোখের ছানি অপোরেশন হয়েছে। বিদিশি লেন্স বসেছে চোখে। এখন ডান চোখে সে সবকিছু পোষ্কার দেখতে পায়। এমনকি সর্ষে পর্যন্ত আজকাল তার নজর এড়ায় না। বাঁ চোখটা অবিশ্যি ছানি পড়ে একদম গেছে! কিছুই দেখে না। বাঁ চোখটা আর কাটানো হবে না! আগের খোকা আর নেই।
 অনেকক্ষণ গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পরেশ। ঘরের ভেতর থেকে মিনতির গলার আওয়াজে তার হুঁশ ফিরল। ''... কই, কোথায় গেলে? পায়খানায় উঠলে না কি?... বলি, ঘরের দরজাটা হাট করে খুলে রেখে গেছ কেন?"
 পরেশ ঘরে এসে দরজাটা টেনে দিল। টচ জ্বেলে মশারিটা তুলে বিছানায় বসল। ঘড়িতে আলো ফেলল। আড়াইটে। 
 মিনতি পাশ ফিরে শুয়ে গজগজ করে উঠল, "কী হল? শোবে না নাকি? ক'টা বাজে? এখন একটু শোও। পরে উঠে করবে।"
 পরেশ জানে এখন শুলে সে আর উঠতে পারবে না। তার চেয়ে না-শোয়াই ভাল। একটু দোনোমনো করে হুনমান টুপির ওপর দিয়ে গামছাটা চেপে মাথায় ভাল করে বাঁধল। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠল। ঘরের বাইরে বেরিয়ে সাবধানে দরজা ভেজাল। শেষে বারান্দার দরজা খুলে উঠোনে নেমে এল। 
 পরেশ নিজে সাইকেলও চড়তে পারে না। হেঁটে-হেঁটেই তার জীবন কেটে গেল। সে ছুটতে শেখেনি। কোনও দিন কোনও কিছুর পেছনে ছোটেনি। কখনওই সে ভেতর থেকে কোথাও পৌঁছনোর তাড়া অনুভব করেনি। রয়ে-বসে, ধীরে-সুস্থে, আলসেমি করে একটা গোটা জীবন সে কেমন পার হয়ে এল! 
 আজকাল পোষ্কার করার সময় একবার না একবার বাইকটায় উঠে দু'দশ মিনিট বসে থাকা তার অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে। আগে বসবার কথা সে ভাবতেই পারত না। বরং পোথম পোথম খোকা যখন বাবুসোনাকে গাড়িতে বসাত তার ভয় লাগত --- যদি ছেলেটা গাড়ি থেকে পড়ে যায়! পোথম দিনকে সে তো খোকাকে বারণই করেছিল, "বাবুসোনাকে একা বসাসনি খোকা!" খোকা তার কথায় পাত্তা না দিয়ে চোখটা টেরিয়ে একবার শুধু তাকিয়েছিল। 
 তারপর থেকে সে-ও সাহস করে গাড়িতে উঠে বসে। গাড়িটা সবসময় ডবল স্ট্যান্ডে রাখা থাকে। সে দেখেছে সামনে-পেছনে যেখানে যেমনভাবেই বসুক না কেন, পড়ার কোনও ভয় নেই। 


এক-একদিন ভোরে তাকে গাড়িতে বসে থাকতে দেখলে অবিশ্যি মিনতি জ্বলে ওঠে, "তোমার লজ্জা-ঘেন্না বলে কিছু নেই নাকি? বৌমা দেখছ তার বাপের দেয়া গাড়ি নিয়ে খোকাকে পর্যন্ত উঠতে বসতে কথা শোনায়, আর তুমি কিনা সেই গাড়িতে ধিঙ্গির মতো উঠে বসে আছ! নামো... নামো বলছি।"


 মিনতির কথা পরেশ ফেলতে পারে না। মিনতি তার দ্বিতীয় পক্ষ। পোথম পক্ষের ইসতিরি ভেগেছিল বিয়ের এক হপ্তার মধ্যেই। সেই যে জোড়ে গেল আর ফেরার নাম করেনি। পরে জানা গেল বিয়ের আগে থাকতে যে ছেলেটার সঙ্গে আশনাই ছিল, কিছুদিন পর তাকে বিয়ে করে তার ঘরে গিয়ে উঠেছে। বৌভাতের পর যে চার-পাঁচ রাত পরেশ তার আগুন সাক্ষী করা পোথম পক্ষের সঙ্গে ছিল, তার সাহসে কুলোয়নি তাকে আদর-সোহাগ করে। বরং সদ্য বিয়ে হওয়া বৌ--- নিজে তক্তোপোষে শুলেও--- পরেশকে বাধ্য করেছিল নীচে মেঝেয় শুতে। পরেশের তখন জোয়ান বয়স; শক্ত সোমথ্থ পুরুষ সে। ডাগর বৌয়ের সঙ্গে একঘরে থাকছে অথচ কাছে ঘেঁষার জো নেই। সেই চার-পাঁচটা রাত তার যে কী কেটেছে!


  পরেশের দ্বিতীয় বিয়ে হতে অবিশ্যি বেশি সময় লাগেনি। তাদের চেয়েও গরীব ঘরের মেয়ে মিনতি এল বৌ হয়ে। এসে আস্তে আস্তে সংসারে মানিয়ে নিল। তারপর দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে কেটে গেল পেরায় চল্লিশটা বছর!


 বিয়ের দু'বছরের মাথায় একটা মেয়ে হয়েছিল। বাঁচেনি, আঁতুড়েই মরে যায়। পেরায় সাত বছর পর খোকা হয়। পরেও একটা বাচ্চা মিনতির পেটে এসেছিল। পরেশ চেয়েছিল বাচ্চাটা হোক। কিন্তু মিনতি চায়নি। অভাবের সংসারে দু'টো বাচ্চা বড় করা যে কী কষ্টের সেটা বুঝে চার মাসের মাথায় বাচ্চাটা নষ্ট করায় মিনতি।


 এই সেদিন পর্যন্ত মনে হত মিনতিই ঠিক। কিন্তু খোকার বিয়ের পর থেকেই পরেশের মনে হয় আর একটা কেউ থাকলে ভাল হত। এখন তাদের এক তরকারি নুনে পোড়া!


 সামান্য আট কাঠা জমিতে চাষাবাদ করে, পরের জমিতে জন খেটে অনেক কষ্টে পরেশ সংসার চালিয়েছে। বাড়িতে গরুও ছিল দু'-তিনটে। যা হোক করে চলে যেত। তারা চোখ থাকতে অন্ধ--- দু'জনের কেউ-ই বিন্দু-বিসর্গ লেখাপড়া জানে না। কিন্তু গোড়া থেকে লেখাপড়ায় খোকার খুব মাথা। সবাই বলত, তারাও ভেবেছিল, একদিন খোকা তাদের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর করবে।


 বছর পাঁচেক আগে খোকা হাই-ইশকুলে চাকরি পেল! বাড়ি থেকে প্রায় চল্লিশ মাইল দূরে--- সেই তারকেশ্বরে। বাড়িতে তখন সকলের কী আনন্দ! তার এক বছরের মাথায় বিয়ে করল নিজের পছন্দে। মেয়ের বাপ বিরাট বড়লোক। নিজেই পয়সা খরচ করে ছাদওলা ঘর-জলের ট্যাঙ্ক-ফিরিজ-পেল্লাই টিভি-এসি-ইনভাটার-বাইক --- সব করে দিয়েছে। ভিটেটাই খালি পরেশের। দেখতে দেখতে খোকা কেমন বদলে গেল! যে খোকা ইশকুলে যাওয়ার আগে মায়ের পা ছুঁয়ে ''মা, আসছি" বলে বাড়ি থেকে বেরোত, সেই খোকা এখন মায়ের সাথে ঠারে-ঠোরে কথা বলে। তার সাথেও ভাল ভাবে কথা বলে না। সবসময় বৌয়ের ভয়ে যেন সিঁটকে আছে। আর বৌমা তো তাদের মনিষ্যি বলে জ্ঞানই করে না!


 এখন চাষবাস আর নেই। বছরখানেক আগে গাবিন গরুটা হঠাৎ স্টোক হয়ে মরে গেল। পরেশের খালি মনে হয় সব মায়া যেন ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। তার খুব মায়া ছিল খোকার জন্য। নাতিটার ওপরও খুব মায়া পড়ে গিয়েছিল। মাস ছয়েক বয়স থেকে বাবুসোনাকে কাঁধে চাপিয়ে রোজ সকাল-বিকাল বেড়াতে নিয়ে যেত। কিন্তু বছরখানেক পর থেকেই বৌমা আর বাবুসোনাকে তাদের কাছে ঘেঁষতে দেয় না। বাবুসোনা যখন "ও ঠামমা, ঠামমা" বা "দাদু, দাদু" করে কাছে আসতে চেয়ে কাঁদে তখন তার বুকটা যেন ফেটে যায়।

 গাড়িটা অন্য দিন দেয়াল ঘেঁষে দাঁড় করানো থাকে বলে বিষ্টিতে বা হিম পড়ে ভেজে না। আজ গাড়িটা অতটা ভেতর করে রাখা ছিল না বলে হিমে পুরু ভিজে গেছে। গা-বেয়ে কাদাগোলা জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। পোত্যেকদিন গাড়িটাকে আগে ঝেড়ে-পুঁছে সাফ করে। তারপর জলে একটা ছেঁড়া কাপড় ভিজিয়ে একটু একটু পোষ্কার করতে করতে ঘসে গাড়িটাকে মাজতে থাকে সে। দোলের দিন খোকাকে পাথরবেড়ে চান করাতে নিয়ে গিয়ে এভাবেই সে ঘসে ঘসে সাবান মাখাত। খোকা তার কত কাছের ছিল। আর আজ!

 গাড়িটা ভিজে গেছে দেখে তার খারাপ লাগে। শীতের রাতে গাড়িটা কেমন ঠান্ডায় পড়ে থাকে! কাল-ই সে চাপা দেয়ার কিছু একটা দেখে রাখবে।

 আজ আর ধুলো ঝাড়তে হবে না। ভাল করে শুকনো কাপড়ে মুছলেই চলবে। যাতায়াতের পথে পেরায় আট মাইল মোরাম ফেলা রাস্তার ধুলো মেখে লাল হয়ে বাড়ি ফেরে গাড়িটা। লাল ধুলো মোটা হয়ে জমে থাকে। মন্দ লাগে না পরেশের। পোত্যেকদিন পোষ্কার করার বাহানায় গাড়িটাকে হাত বুলিয়ে, আদর-যত্ন করে অনেকটা সময় বেশ সুন্দর কেটে যায়। খোকা গাড়িটা সার্ভিসে দিলে মন খারাপ হয়ে যায়। 


 ঘন্টা দেড়েক গাড়িটা ভাল করে মুছল সে। আজ আর তার গাড়িটাতে উঠে বসতে ইচ্ছা করল না। সে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ গাড়িটার সামনে--- ঠাকুরতলায় বসে রইল। হিম পড়ে তার টুপি-চাদর অনেকটাই ভিজে গেল। খোকার ওঠার আওয়াজ পেয়ে সে উঠে ঘরে এসে একটু শুল। পাঁচটা নাগাদ খোকা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।


 খবরটা এল সাড়ে সাতটা নাগাদ। সে তখন মাঠ থেকে ফিরছিল। দেখল বাড়ির সামনে অনেক লোক আর একটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। ট্যাক্সিতে মিনতি, বৌমা, বাবুসোনা আর খোকার বড় শালা তরুণ। পরেশ আসতে তাকে সবাই মিলে ট্যাক্সিতে তুলে দিল। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্যাক্সি সাঁ সাঁ করে ছুটতে আরম্ভ করল। খোকাও এরম জোরে বাইক চালায়। মনে আছে একবার সে খোকার গাড়িতে চেপেছিল। খোকা লাল গাড়িটাকে হুশ হুশ করে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন কোথায় যাচ্ছে তারা? একবার কানে এল বৌমাকে তরুণ জিজ্ঞেস করছে, "অ্যাকসিডেন্টটা লরির সঙ্গে হয়েছে বলল? কোথায়...? গজার মোড়ের কাছে?" বৌমাকে দেখল শুধু ঘাড় নাড়ছে আর দু'চোখ দিয়ে হু হু করে জল গড়িয়ে পড়ছে। বাবুসোনাকে কোলে নিয়ে মিনতিও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। পরেশের মাথা থেকে একটু একটু করে কো'শা কেটে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরে তরুণ আবার জানতে চাইল, "বাইকটা লরির পিছনের চাকায় ঢোকার আগে... প্রদীপ কি ছিটকে গিয়েছিল...? বৌমা মুখটা হাত চাপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল। ঘাড় নেড়ে বলল, "কিছুই জানি না রে দাদা! ফোনে শুধু বলল, তারকেশ্বরে একটা নার্সিংহোমে নিয়ে গেছে। আর... গাড়িটা নাকি ভেঙে-চুরে একদম নষ্ট হয়ে গেছে।"


 মাথায় একটা চক্কর দিয়ে উঠল পরেশের। জ্ঞান হারানোর ঠিক আগের মুহূর্তে সে দেখল লাল ঘোড়াটা সোঁ করে সাদা কো'শার মধ্যে মিলিয়ে গেল।






প্রকাশিত পর্ব

ঊনবিংশ সংখ্যা ।। ২১সেপ্টেম্বর।। নরকের প্রেমকাহিনী ।। তন্ময় ধর

নরকের প্রেমকাহিনী     তন্ময় ধর  'নরক !! না না, এমন নামের ছেলের সাথে কিছুতেই তোমার বিয়ে হতে পারে না' কমল মিত্রসুলভ স্বর, দৃষ্টি ও আভি...