Wednesday 31 August 2022

সংখ্যা ষোড়শ।। ৩১ আগস্ট ২০২২ ।। ভাড়াটে প্রেমিক ।। তনিমা হাজরা

 ভাড়াটে প্রেমিক 

তনিমা হাজরা 

অরেঞ্জ জুসে সিপ করতে করতে সাইটটা সার্চ করছিলেন মিসেস কৃপা আডবানী। উনি এই সাইট থেকেই নিয়মিত প্রেমিক ভাড়া করেন। সাইটটার সন্ধান ওকে প্রথম দিয়েছিল শবনম ফারিয়া একটা কিটিপার্টিতে। একটু costly হলেও এখানে বেশ হ্যান্ডসাম আর ফ্রেশ প্রেমিক ভাড়া পাওয়া যায়। এদের স্বভাবের মধ্যে সেক্স আর ইমোশনের মাত্রাটাও পার্ফেক্ট পাঞ্চ করা।  বেশ শিক্ষিত আর রুচিবোধসম্পন্ন। তাই ইন্ট্যালেকচুয়াল আড্ডাও দিব্যি জমে যায়।। 

সাইট থেকে একটি ছেলেকে পছন্দ করে  বুক করে মিট করার অ্যাড্রেস ডিটেইলস দিয়ে এ্যারোমা বাথ নিতে আপার ফ্লোরে গেলেন মিসেস আডবানী। যদিও ছেলেটার বয়েস বেশ কম, কিন্তু কৃপা এখনো দারুণ ইয়াং আর অ্যাট্রাকটিভ। খুব গোপন ইচ্ছে হলেও এটাই সত্যি যে যত মেনোপজের দিকে এগোচ্ছে বয়েস ততই ইয়াং ছেলেগুলোকেই বেশি ভালো লাগছে কৃপার। থার্টির নীচে এজগ্রুপ হলে বেশ costly পড়ে যায়। তা হোক। শুধু রীতেশের Adbani group of cotton Mills ই তো নয়, তার পৈতৃক ব্যবসা K.C.logistics থেকেও কৃপার বেশ ভালো আয়।।  জীবনটা এনজয় না করে সে তো আর টিপিক্যাল মেন্টালিটির মেয়েদের মতো নষ্ট করে দিতে পারে না।। 

এই  ছেলেটার সাথে যদি ফিজিক্যাল আর ইমোশনাল ম্যাচিং হয়ে যায় তাহলে মাস ছয়েকের জন্য প্রেমিক হিসেবে রেখে দেবেন তিনি। অনলাইন পেমেন্ট করে দিলেন আপতত দুমাসের।


 রীতেশ আডবানী মানে তার হাসবেন্ড এসব ব্যাপারে বেশ লিবারেল।বরং সে বেশ ফ্রেন্ডলি তাকে সাজেষ্ট করে,  হাইকোয়ালিটি কন্ডোম যাতে ইউজ করে ছেলেগুলো সেটা যেন কৃপা ঠিকঠাক এ্যাসিওর করে নেয়। তবে অবশ্য এমনিতেও কৃপা আর রীতেশ এখন প্রায় সাত আট বছর ধরে ভাই-বোনই বলা যায়। বিজনেস আর সোস্যাল এক্টিভিটি সামলে যে যার জগতে ভীষণ ব্যস্ত। তাদের একমাত্র মেয়ে কানাডাতে সেটেল্ড একটি কোরিয়ান ছেলেকে বিয়ে করে। মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষীণ। 


***


সিডিউল অনুযায়ী Venom Cafe তে টেবল নং নাইনে ছেলেটি বসেছিল। দূর থেকে দেখে কেমন ছ্যাঁত করে উঠলো বুকটা।  ধুর!  তাই আবার হয় নাকি?  তাছাড়া যার সাথে মিল পাচ্ছে সে তো এখন ষাট বছরের বৃদ্ধ। বেঁচে আছে কিনা তাও জানে না কৃপা।  শুনেছিল একটা শরনার্থী ক্যাম্পে পুলিশ এনকাউন্টারে মারা গেছে প্রায় পঁচিশেক বছর আগে। 

বেওকুফ ভাবনাটাকে স্মার্টলি মন থেকে তাড়িয়ে সামনে এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করবার জন্য হাত এগিয়ে দিলো সে।

-হাই আই এ্যাম কৃপা। 

--আই এ্যাম দিলশান। নাইস টু মিট ইউ। 


***

ভাড়াটে প্রেমিকদের পরিচয় জানতে নেই। তবু দিলশানই শুরু করলো তার আগ বাড়িয়ে তার নিজের জীবনের কথা বলা। 

দিলশান বলে চলে, তাকে সাতদিন বয়সের রেখে তার মা চলে গিয়েছিল একজন বিশাল বিজনেস ম্যাগনেটকে বিয়ে করে। তার বাবা একজন ডাক্তার। ছত্তিসগড় এ একটা ট্রাইব্যাল ক্যাম্পে ডাক্তারি করতে গিয়ে মারা গেছেন অনেক দিন আগে। 

  

যেন কেমন একটা রহস্যময় মোহ ছেলেটার মধ্যে। সে যেন এক অদ্ভুত মিল দেখতে শুরু করেছে ছেলেটার আচরণ আর শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মধ্যে, কৃপার কলেজ প্রেমিক এবং ঝোঁকের বশে বিয়ে করে নেওয়া সোহেল রহমানের সাথে।


না,না, তাই আবার হয় নাকি ?  এইবয়সের সব হ্যান্ডসাম আর এডুকেটেড ছেলেদের কথা বলার স্টাইল  আর আচরণ একই রকম। 


বেশ মাস কয়েকের শারীরিক আর মানসিক সম্পর্ক এখন তাদের। ছেলেটা কৃপাকে অনুরোধ করেছে তাকে যেন সিডিউল টাইমের  মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে আর এক্সটেনশন করতে পারবে না। 

আসলে সে যে ম্যানেজমেন্ট কোর্সটা করছে সেটা প্রায় শেষ। এটার করে সে হায়ার এডুকেশনের জন্য বিদেশে অ্যাপ্লাই করেছে ইতিমধ্যেই  আর সেই বিদেশ যাত্রা এবং পড়ার জন্য হিউজ খরচ।  

যে খ্রীশ্চিয়ান অরফানেজ থেকে সে মানুষ হয়েছে সেই ট্রাষ্ট এতদিন অব্দি নানা ফান্ড তাকে জোগাড় করে দিয়েছে নিতান্তই সে দারুণ স্টুডেন্ট বলেই। 

কিন্তু বিদেশে যাওয়া আর পড়ার জেদ তার অদম্য।  কিছুতেই সে হারবে না।  সে যাবেই। তখন এক বন্ধুর কাছ থেকে এই সাইটটার সন্ধান পেয়ে সে অ্যাপ্লাই করে। বড়লোক প্রায় প্রৌঢ় মহিলাদের শারীরিক আর মানসিক ক্ষিদে মিটিয়ে যদি তার বিদেশ যাত্রার পারানিটা জোগাড় হয়ে যায় তো তাতে তার কোনো  শুচিবায়ুতা নেই।  এমনিতেও সে ওইসব প্রেম ট্রেমে বিশ্বাস করে না।


***

গল্পটা শুনতে শুনতে গলা প্রায় শুকিয়ে আসে। কৃপা আডবানী জিজ্ঞাসা করে, হোয়াটস ইয়োর ফাদার্স নেম দিলশান ?   

চকোলেট ফ্লেভার্ড কন্ডোমের র‍্যাপটা  ছাড়াতে ছাড়াতে অন্যমনস্কভাবে দিলশান বলে, সোহেল রহমান। একচুয়ালি হি ইজ মাই রিয়েল গড।


***


চুক্তির দেড়মাস আগেই তাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন কৃপা আডবানী। কারণ পরদিন ভারসোভার বিশাল বাংলোতে কৃপা আডবানীর ডেডবডি পাওয়া যায় অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করে। আর দিলশানের এ্যাকাউন্টে একটা মোটা অঙ্কের টাকা ক্রেডিট হয়েছিল K.C. logistics কোম্পানির একাউন্ট থেকে। 


***


দিলশান কিন্তু  সত্যি জানে না তার নিজের বাবার বা মায়ের নাম। সে এটাও জানে না কে বা কারা কেন তাকে একটা ডাষ্টবিনে ফেলে গেছিল আর সেই ডাষ্টবিন থেকে কুড়িয়ে তাকে জমা দেওয়া হয়েছিল  শহরের এমন একটি অনাথ আশ্রমে।। 


 অরফানেজের ডাক্তারবাবু সোহেল রহমান  আর তাঁর ছেলে কবীর তার খুব কাছের মানুষ। তারা দুজনেই মানুষের সেবাতে কাজ করে চলেছেন আজও।। 

 

বন্ধু কবীরের ডায়েরিতেই পেয়েছিল তার মা কৃপার নাম আর ডিটেইলস।। তারপর থেকে অনেক দিন ধরে সে এই সাইটটায় মহিলাটিকে পোক করে চলেছে। 


 কবীরকে ভারি অদ্ভুত মনে হয় দিলশানের। কি নির্লিপ্ত, কি মুক্ত। যেন সে এই জগতেই থাকে না অথচ মানুষের সামান্য বেদনা, সামান্য দুঃখ তাকে কি অসম্ভব আবেগ প্রবণ করে তোলে। 


  কি করে সে মাফ করে দিলো তার মাকে ? কবীর  ক্ষমা করলেও দিলশান পারেনি।। নাকি দিলশানের এ এক দুরন্ত আক্রোশজনিত নির্মম প্রতিশোধ তার নাম না জানা, না ছুঁতে পারা, না খুঁজে পাওয়া বাবা আর মায়ের প্রতি, এই অবক্ষয়মন্ডিত সমাজব্যবস্থার প্রতি, এই স্বার্থপর, দায়িত্বজ্ঞানহীন ভোগবিলাসে ডুবে থাকা প্রজাতির প্রতি ?



তনিমা হাজরা

১৯৬৮ সালে বাঁকুড়ায় জন্ম। সেখানেই স্কুল ও কলেজ। কবিতা ছাড়াও গল্প, রম্যরচনা, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি লিখে থাকেন। একাধিক একক ও যৌথ গ্রন্থ প্রকাশিত। 

ওঁর ভাষায়, "লিখি নিজের জন্য, লিখি মানুষের কাছে পৌঁছবার জন্য। লেখনীই আমার অস্ত্র, লেখনীই আমার অস্ত্র, লেখনীই আমার জয়োল্লাস"।

Wednesday 24 August 2022

সংখ্যা পঞ্চদশ।। ২৪ আগস্ট ২০২২ ।। এক জীবনের গল্প ।। বনশ্রী রায়

 এক জীবনের গল্প 

বনশ্রী রায়


রায়চৌধুরি বংশের প্রতিপত্তি আজ ইতিহাস ৷ দীননাথ রায়চৌধুরির পূর্বপুরুষরা উত্তরপ্রদেশের তহমিনার জমিদার ছিলেন ৷ কথিত আছে, এই বংশের রাজা রামপাল রায়চৌধুরির নামাঙ্কিত দিঘিতে একখানা বড় কষ্ঠিপাথর ডুবোনো ছিল ৷ জলের সমোচ্চশীলতার কারণে জলতল কখনো নিচে নামতো না ৷ তাই শুখা মরশুমেও প্রজাদের জলকষ্ট ছিল না ৷ এই বংশের সন্তান দীননাথ জমিদারির ঠাঁটবাঁট ছেড়ে পরিবার নিয়ে চলে আসেন বর্ধমান সদর শহরে ৷ তিনি রেলের চাকরি জোগাড় করেন ৷ দীননাথের পরিবারে স্ত্রী , একটি ছেলে আর এক মেয়ে ৷ সন্তানেরা সাধাসিধে ভাবেই বড় হয়ে উঠছিল ৷


   আমার গল্পের মূল চরিত্র অরণিকা , ডাকনাম অর্ণি , দীননাথ রায়চৌধুরির মেয়ে ৷ তার শিক্ষাদীক্ষা সরকারি স্কুলে , তারপর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডী পার হয় ৷ অর্ণি টিউশন করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাত ৷ দাদা, বহুদিন আগে একজন ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করে ঘরজামাই ৷ মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না ৷ অর্ণি কিন্তু সেই দায় এড়াতে পারে নি ৷

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে অরণ্য তাকে বেশ পছন্দ করত ৷ অরণ্য ফেলোশিপ নিয়ে অষ্ট্রেলিয়ায় পড়তে গেল ৷ তারপর বহুবার ফোন আর , মেল এসেছে ৷ অর্ণিরও একটা চোরা টান ছিল অরণ্যর উপর কিন্তু বৃদ্ধ বাবা-মা'কে ছেড়ে তার পক্ষে বিদেশে সেটল করা সম্ভব নয় ৷


       বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষে একটি স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ এল৷ এরমধ্যে বাবার পছন্দ মতো পাত্রের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসা সারা ৷ নতুন পরিবেশে মানিয়ে চলার ভীষণ চেষ্টা করে অর্ণি ৷ শ্বশুরবাড়ির নিয়মকানুন বেশ অন্যরকম ঠেকত ওর কাছে ৷ শান্তন , অর্ণির স্বামী , উপরে অর্ণির ঘরে ঢুকতো না ৷ শাশুড়ি ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে পছন্দ করতেন ৷ অর্ণি অবশ্য বিশেষ আপত্তি করত না , মায়ের এই অতি স্নেহপ্রবণতা দেখে ৷ মনে পড়ত নিজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কথা , যাঁরা হাপিত্যেশ করে সন্তানের পায়ের শব্দ শোনার আশায় দিন গুজরান করে ৷ অর্ণি ফুলশয্যার দিন থেকে জেনে এসেছে নতুন ঘরের দোর আটকাতে নেই ৷ বাড়িময় লোকজন ৷ ফিসফাস ৷ শাশুড়ি অর্ণিকেও কাছে টেনে রাখত ৷পাড়া প্রতিবেশির সঙ্গে মিশতে দিত না ৷ চাপা স্বভাবের মেয়েটি , বই পড়ে , লেখালিখি করে কাটিয়ে দিত দিনরাত ৷ বছর গড়িয়ে চলে, দেখতে দেখতে এগারোয় পড়ল শান্তন-অর্ণির বিয়ের বয়স ৷ রোজনামচা পরিবর্তনহীন ৷ ইদানিং শ্বশুরমশাই চাকরিতে অবসর নেওয়ায় অর্ণির উপর আর্থিক দায়ভার বাড়তে লাগলো ৷ অর্ণির কাছে খোলা আকাশ ছিল তার ওই স্কুলে পড়ানোর অবকাশ ৷ বাকি সময়টুকু যেন দমবন্ধ হয়ে আসতো ৷ অসহায় বৃদ্ধ মা বাবা আর অন্যদিকে বংশের আভিজাত্য ৷ শান্তন অলস প্রকৃতির মানুষ ৷ পারিবারিক ব্যবসাটুকু সামলানোর ক্ষমতাও নেই ৷ বাড়িতে বন্ধুবান্ধব , আড্ডা বসিয়ে দিনযাপনে অভ্যস্ত৷ ব্যবসা সামলায় ইয়ার-দোস্তরা ৷ ফলে একসময় মুনাফার লাভের অংশ তাদের পকেটস্থ হয়ে পড়ে ৷ অর্ণি তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারে না। কারণ শান্তন আর তার মধ্যে তখন বিস্তর দূরত্ব ৷ স্বামী আর স্ত্রীর মাঝে তখন ঢুকে বসে আছে অনেক মানুষ , অনেক বাদানুবাদ , হাজার তর্ক ৷ ইচ্ছে করেই অর্ণি রোজ স্কুল থেকে কাজ নিয়ে ফিরত ৷ কখনো স্বপ্ন দেখতো দুটো ছোট্ট ছোট্ট হাতের ৷ কিন্তু সময়ের নৌকোয় তারা চিরকাল ফিরতি পথে হেঁটে চলে গেছে, কোনোদিন ধরা দেয়নি।


    কিছুদিনের ছুটি নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে একবার অর্ণি বেরিয়ে পড়ল দেশ দেখতে ৷ আর সেই থেকে শুরু হল তার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় ৷


        ট্যুরগাইড অর্ণি রায়চৌধুরি ৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা ঘুরে বেড়ায় মাসের পর মাস ৷ প্রকৃতি, মানুষ মনের ভীষণ কাছাকাছি ৷ পরিচয়ের দরজা খুলে গেল ৷ মাসিমা ,কাকিমা , দিদি ,দাদা , বৌদি — কত পরিচয় , কত সম্পর্ক ৷ তার সঙ্গে জুড়ে রইল চাকরিটুকু ধাগার মতোন ৷ জীবনের পরিসর বেড়ে যাওয়ায় অর্ণির ভিতর দুঃখগুলো ছোট ছোট হতে লাগলো ৷


  এদিকে অর্ণির শ্বশুরবাড়ির প্রবল আপত্তি নতুন পেশায় ৷ বাড়িতে রীতিমতন হম্বিতম্বি , মানসিক নির্যাতন ৷ নীরব হয়ে থাকতো যে মেয়েটি , আজ সবাক্ ৷ পাওনা গণ্ডার ঝুলিতে শূন্য ভরে কিছুতেই আর ওই বদ্ধ চারদেয়ালে ফিরতে পারবে না ৷ লড়তে হবে বাঁচবে বলেই ৷ অর্ণি জানত যে সে তার নিজের রক্ষণশীল পরিবারের কাছ থেকে কোনোরকম সাহায্য পাবে না ৷ একদিন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সোজা ট্রেনে চেপে বসল ৷ ট্রান্সফার নিয়ে কলকাতায় ৷ তারপর লড়াই শুধু লড়াই , অর্থের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে, জীবনের সঙ্গে ৷ দীর্ঘ বারো বছর পার হয়ে থিতু হল এক কামরা এক চিলতে নিজের ফ্ল্যাটে ৷ বছর দুয়েক আগে শান্তন ডির্ভোস চেয়েছে , অর্ণি এককথায় সই করে দিয়েছে ৷ 

 

      শান্তন নতুন করে ঘর বেঁধেছে ৷ আর অর্ণি একা পথ হাঁটতে শিখেছে ৷ লড়তে শিখেছে ৷ বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুকে অরণ্যের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ৷ অরণ্য দেশে ফিরেছে ৷ এখন বিলাসপুরের গ্লোবাল কলেজে অধ্যাপনা করে ৷ কলেজের এক কলিগের সঙ্গে লিভ ইন সম্পর্কে রয়েছে ৷ তবু মেসেনজারের চ্যাটে অর্ণির প্রতি এক ফেলে আসা মনকেমনের গল্প করে রোজ ৷

  

      টুকটাক কথাবার্তার ফাঁকে অরণ্য অর্ণিকে জানায় - সে দিন দুয়েকের জন্য কলকাতায় আসছে ৷ অর্ণির সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছেও প্রকাশ করে ৷ 


      সেদিন ছিল শনিবার ৷ স্কুলের ফিরতি পথে একখানা চাঁপা ফুল রঙের শাড়ি , হাতখোঁপা আর ছোট্ট কালো টিপ পরে সোজা কফিহাউসে অরণ্যের মুখোমুখি অর্ণি ৷ দীর্ঘদিনের অদেখার পর। অরণ্য ব্লু-ডেনিম জিন্স আর ব্ল্যাক শার্ট ৷ চশমার পাওয়ার সিলিনড্রিক্যাল ৷ বদল নামমাত্র ৷ অরণ্য একমনে অর্ণির দিকে তাকিয়ে রয়েছে ৷ কি নম্র , শান্ত ধীর সেই ছোট্টখাটো মেয়েটা ৷ চোখের নিচে কালো রঙের অস্পষ্ট ছোপ জীবনযুদ্ধের ছাপ রেখেছে ৷ কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে অরণ্য জেনে নিয়েছে অর্ণির ভাঙাচোরা গ্রাফ ৷ তবু যেন এক অবাধ্যতা টানছে অর্ণির দিকে ৷ এক সময় অরণ্য একটি জিপসি মেয়ের প্রেমের ফাঁদে পড়েছিল ৷ বন্য সৌন্দর্যের সঙ্গে বোহোমিয়ান জীবন খাপ খাওয়ানো অতো সহজসাধ্য নয় ৷ সব ছেড়েছুড়ে আবার নিজের ছন্দে ফিরে আসে ৷ পরদেশ ছেড়ে সটান স্বদেশ ৷ তারপর বিলাসপুর ৷ দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়ে সাননির ৷ মেয়েটি দেহাতি , তবে শিক্ষিতা , একই কলেজে পড়ায় ৷ সাননি যেন কালো ভ্রমরি ৷ বড় বড় চোখের পাতা , সরল, অসম্ভব যৌন মাদকতা ৷ এক উচ্ছল জলস্রোত আঁচড়ে কামড়ে জড়িয়ে থাকে ৷


        অর্ণির কাছে কোনো সত্য গোপন করে না অরণ্য ৷ সাননির কথা ৷ তাদের সম্পর্ক , প্রেম , গোপন অভিসার ৷ অ্যাতো তোলপাড়ের মাঝে হঠাৎ অরণ্য অর্ণিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে ৷ অর্ণি প্রথমে মনে মনে ভারি খুশি হলেও ধীরে ধীরে সাময়িক উন্মাদনা বাষ্পের মতো বাতাসে মিলিয়ে যায় ৷ জীবনের কঠিন লড়াইয়ে জিতে অর্ণি আত্মবিশ্বাসী, নিখুঁত হাতে তার বাবুইবাসা গড়েছে৷ সাজিয়েছে নিজের খুশিমতো তার আনন্দ , স্বপ্ন, বিষাদের রাত ৷ এখন আবার নতুন ভাবে জোছনা মাখতে , চাঁদ দেখতে অপারগ মন ৷ এইতো বেশ ভালো আছে ৷ সম্পর্ক গড়া ভাঙার ভিতর তীব্র জ্বালা ৷ তার চাইতে ঢের আনন্দ এই মুক্ত জীবনে৷ স্বাধীন বিচরণে ৷ ভালোবাসার ফ্রেমে ধরা পড়লে নিত্য প্রেমের ছকবন্দি খেলায় অরণ্যরা একদিন নিঃশেষ করবে অর্ণিদের ৷ হাড় মাংস সম্বল করে জিরজিরে খোলসে পড়ে থাকবে কেবল অবশেষ৷ তার চেয়ে অরণ্য বেঁচে থাক অর্ণির মনে, বন্ধুত্বের স্পর্শটুকুই বা কম কী ? 


      তখন সূর্যের মোলায়েম আলো মাখছে গোটা শহর৷ ট্রাম ছুটছে বাবুইবাসার দিকে ৷ হোর্ডিং মুখে মুখে জণাকীর্ণ আকাশ ৷ আলোর ফুলকি মন ছুঁয়ে মিশছে ব্যাসাল্টের কালো হৃদয়ে ৷ পারদের উচাটন ৷ ফ্লাওয়ার ভাসে জারবেরার জ্বর ৷ তখন কফিকাপে একলা জাগে ঠৌঁটের উষ্ণতা ৷। 

বনশ্রী রায়

ভূগোলের শিক্ষিকা। সাহিত্যচর্চা এবং বেড়াতে ভালোবাসেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশ পায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'মুঠো ভরা রোদ্দুর' এবং 'মন আর মনকথারা'।


Wednesday 17 August 2022

সংখ্যা চতুর্দশ।। ১৭ আগস্ট ২০২২ ।। বৃষ্টি বাজি ।। নূপুর গোস্বামী

 বৃষ্টি বাজি 

নূপুর গোস্বামী 


মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম ফেলুয়াডিহিতে  একদিন বেলা আটটার সময় স্বামী স্ত্রী'তে দাম্পত্যালাপ চলছিল। নিচু স্বরে প্রথমে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর পর অবশ্য কাক চিল  তিষ্ঠতে পারলে হয় !


হরেন হুঁকায় টান মেরে রাগে রাগে বললো-

আমার সাথে বাজে বকতে এসবিনি বলে দিচ্চি, এক থাপ্পড়ে মুখ এখুনি বন্ধ করে দুবো—-


ক্ষণপ্রভা স্বর আরও দু-পর্দা চড়িয়ে চেল্লালো-

খুব গতর বেড়েছে বল ?


পোড়ামুয়া মিনসে, বলি আচে তো ওই নেশা করা শুকনা হাড় কয়টা ! থাপ্পড় দিতে এলে তোকে কি পূজা করব নাকি হরে মিনসে ! ক্ষণপ্রভা দাসী যে সে মেয়া লয় ! কতাটা ভুলিসনি কিন্তু ! 


জানালার শার্সি খোলা আমার, অবহেলায় এক ফালি রোদ গড়াগড়ি খাচ্ছে সেই কখন থেকে আমার রঙিন দেওয়াল জুড়ে। বে- রঙা জীবনে চোখ ডুবিয়ে বসে আছি… চোখে পড়ছে সামনের  বড় নিমগাছটার নিচে হরেন বাউড়ির কালো হাড় জিরজিরে শরীরটা ! সে তামাকে টান মেরেই চলেছে আর স্ত্রী'র এলোপাথাড়ি দুমদাম কাজ কর্মের উন্মুক্ততায় মাঝে মাঝে ক্ষেপে উঠে গলা চড়াচ্ছে - চোপ ইতর মেয়েছেলে ! তোর বড় সাহস বেড়েচে দেকচি।


আমার শরীর লিয়ে খোঁটা দিস ? ক্ষণপ্রভা দু'পা এগিয়ে কোমরে কাপড় পেঁচিয়ে গর্জালো- তোকে এখনো পিটে দিইনি এ তোর অনেক ভাগ্য ! হাড় হাভাতের পো... আমার জেবনটায় একেবারে ঘেন্না ধরিয়ে দিলে গা ! 


হরেনের জবাব যেন তৈরী - সাহস আছে তো মেরে দেকা । একেই বলে কলিকাল! নিজের সোয়ামি কে অছেদ্দা ! গালি গালাজ ! 


আরও পর্দা চড়ায় ক্ষণপ্রভা - ওরে রাজার ব্যাটা রে ! আমি বাড়ি বাড়ি বাসুন মেজে, উটুন নিকিয়ে কাপড় কেচে ধান ভেনে যা দুটো আনি - তা দিয়ে তো ওই ভুড়ুক ভুড়ুক তামাক টানচু, খেটে খেটে আমার জেবনটা হ্যাঁচোর প্যাঁচোর ! শরীলে আমার বল্ নাই, পরণে একটি কাপড় নাই… আবার মেজাজ ও দেখাচ্চে ! শেষমেশ গলার সবটুকু জোর উজাড় করে দু-পা ছড়িয়ে কাঁদতে লাগল ক্ষণপ্রভা আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে !


আমি চুপ করে বসে আছি। আজ আর কিছুই ভালো লাগছে না। অতীতে মন চলে যায়। এক সময় এদের হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল, অল্প বিস্তর জমি সমেত সুন্দর একটা সংসার ছিলো ! হরেন ভাগচাষী। সারা বছরের চাল-ডালের অভাব হতো না। অনেক মানত, তাবিজ কবজ করেও ওদের সংসারে যখন সন্তান এলো না, তখন ওরা শুধু হাপিত্যেশ করেছে, কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে করার কুপরামর্শে কখনো কান দেয়নি হরেন ! নিজের বউকে  প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসত সে। কিন্তু হঠাৎ গ্রামের কিছু লোক শহরে গিয়ে ফাটকা ব্যবসা শুরু করলো ! হরেনও দু'পয়সা বেশী কামানোর আশায় তাদের সাথে শহরমুখো হল… আগাপাশতলা না ভেবেই।


তখন থেকে পাশা পাল্টালো ! সকাল হলে দুটিতে হেসে খেলে নিজের নিজের কাজে আর বেরুতো না। আগে চাঁদের রাতে নিকোনো উঠানে ছেঁড়া চাটাই-এ বসে আঞ্চলিক গাথা-গান গাইতো বড় সুন্দর করে। নেশা ভাঙ্গে, কাঁচা পয়সায় সেই হরেন বেসুরো হল... বেপথু হল। চোখের সামনে সব পাল্টে গেল ক্রমশঃ।


ধীরে ধীরে বেলা বাড়ে। খয়েরবাগান মাঠে সূূর্যি-দেব মাথার ওপর তাপ ছাড়ছে , দূরে নিমাই ভৌমিকের পুকুরে রোজ সকালে সাঁতার কাটা পাতিহাঁসগুলো প্রত্যেক দিনের একঘেয়েমিতে ক্লান্ত হয়ে হেলেদুলে শ্যাওলা ধরা ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে প্যাঁক প্যাঁক ধ্বনিতে কোন তেপান্তরের দিকে যাত্রা করলো, সে কথা বলে গেল না! কেবল তাদের সারিবদ্ধভাবে দূরে মিলিয়ে যাওয়াটা ছবির মতো মাটিতে পড়ে রইলো ! আমি আমার নিজস্ব কাজ সেরে কৌতূহল ও প্লট সন্ধানের আশায় নিজের জায়গায় গিয়ে বসলাম আবার ।  


বেলা পড়ে আসে, রাগও পড়তে থাকে স্বামী-স্ত্রীর ! হুঁকোটা বারান্দার কোনায় ঠেকিয়ে রেখে মধ্য চল্লিশের হরেন সবে চল্লিশে পা রাখা বউ-এর মুখ থেকে তার হাতখানি নিজ হাত দিয়ে সরিয়ে বউয়ের ছেঁড়া শাড়ির আঁচল দিয়ে - অনাদরে অবহেলায় আমসি হওয়া মুখ খানি যত্নে মুছিয়ে দিতে দিতে বলল- আমিও কি বসে থাকি বলতো ক্ষণু ? তুই খাটিস আর আমি কি একটুও খাটিনি ? তুই চাল লিয়ে এসিস রায়দের ধান বেছে দিয়ে, আমিও তো মনডুহারির জলা থিকতে রোজ মাছ, শামুক, গেঁড়ি- গুগলিটা লিয়ে এসি তো, ক্যানে না জানি তুই আঁশ গন্ধ না হলে ভাত খেতে পারিসনি এক গালও ! আগে আমি শহর থিকতে কত রোজকার করে আনথুম ! তোর মুখে হাসি ফুটাত- কত টিপের পাতা, নকপালিশ, রঙিন ফিতা আর সেই সবুজ ডুরা শাড়ি ! তখন কি বিষ হারিয়ে এমন জল ঢোরা হয়েছিলাম আমি !


আড়চোখে স্বামী কে দেখতে লাগলো স্ত্রী। স্ত্রীর চোখের জলে ততক্ষণে স্বামীর পৌরুষ গর্ব খর্বের মুখে ! ক্ষণপ্রভা ঘেমে নেয়ে আদরে আব্দারে  অভাবে চোখের জলে বলে যেতে লাগলো- কেনে তুমি কলকাতায় গিয়ে জুয়া খেলে জমিজমা, গরু বাছুর সব শেষ করে দিলে... আমার দু'রত্তি গয়নাও ছাড়লেনি ... নইলে আমাদের এমন দিন এসতোনি ! 


ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে ক্ষণপ্রভা। একটি ঘুঘু পাখি একটানা ডেকে চলে ক্ষণপ্রভার দুঃখুর সাথে তাল মিলিয়ে। নিমগাছ ভরা ছোট সাদা ফুল। তার গন্ধের মাদকতায় নানা পতঙ্গের আসা যাওয়া অবিরাম। অলস হাওয়া পিরপির করে পাতলা শরীর নিয়ে ছুঁয়ে যায় এই পৃথিবীর তাবৎ জীব আর জড় জগৎ। 


জুয়া মানুষের আদিম আসক্তি ! মহাভারতের কাল থেকে যার শুরু ! শেষ পর্যন্ত জিতে যাওয়ার অবাস্তব আকাঙ্ক্ষা মানুষকে নিঃস্ব করে দেয় !

এক সময় কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলে  মারোয়াড়ীরা বৃষ্টি নিয়ে জুয়া বা ফাটকার প্রচলন করেছিলেন। আকাশে মেঘ দেখে বৃষ্টি হবে কি হবে না সে নিয়ে বাজি রাখা ! এই জুয়া নাকি মারোয়াড়ী সম্প্রদায়ের পুরনো সংস্কারের সাথে জড়িত। রাজস্থানের কিছু অঞ্চলে বর্ষার পরিমাণ এতটাই কম ছিল যে বৃষ্টিকে তাঁরা সৌভাগ্যসূচক  মানতেন। বৃষ্টির তীব্র প্রতীক্ষা থেকেই এই জুয়ার শুরু।


এই বাজির জনপ্রিয়তায় দূরের গ্রাম মফস্বল  থেকেও ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মানুষেরা আসতেন ভাগ্য ফেরাতে। চিরদিনের মতো শেষকালে গরীব মানুষই হতেন বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ! নগদ অর্থ, ধন, সামান্য জমিজমা সব বাজি ধরতেন মানুষগুলো। লাভের আশায় ! কিন্তু শেষে পারিবারিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে ঘটনাটি শেষ হতো !


এরাও ছিলো এমনি একটি পরিবার। আজ বৃষ্টি বাজিতে হরেন সব হারিয়েছে ! তারপর থেকে অনটনই এদের সঙ্গী...আজ কাল এমন করেই জীবন যুদ্ধে দিন চলে তাদের। কখনো ওঠা কখনো পড়া। দিন শেষে দুঃখ ভুলে গিয়ে সব হারানো স্বামীর মঙ্গল প্রার্থনায় ঠাকুরের কুলুঙ্গীতে প্রদীপ জ্বালায় স্ত্রী। একটি লক্ষ্মী পেঁচা ঠিক এসে বসে থাকে এদের লক্ষ্মীহীন সংসারে প্রায় সন্ধ্যাতে ! যখন জারুল তলার অন্ধকার মিলিয়ে যেতে থাকে মেঠো চাঁদের কমলা আলোয়। আজও হরেন নিত্য রুটিন বানায়, কাল কোন খালে যাবে সে মাছ ধরতে ! কোন জঙ্গলে গিয়ে আঁশফল আনবে যা তার বউ এর মনের মতন ঠিক।

 

ওই তো ওরা হাসছে, ওই তো ফের আকাশে মেঘ দেখে বাজি ধরছে বিকেল চারটার মধ্যে কতখানি বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে  আসবে তাদের মাটির ঘরে... স্বামী-স্ত্রী'র মধ্যে যে জিতবে সে অপরজনের সেবায় আগামী দুটি দিন অতিবাহিত করবে ! কোন ঝগড়াঝাঁটি ছাড়াই !

 

এইভাবে রাতের কালো আঁধারে দুটি সরল নিরীহ  লেখাপড়া না জানা মানুষ সব অন্ধকার কাটিয়ে কাটিয়ে সাঁতরে এগিয়ে চলে। 


এত দুঃখেও একটি প্রশ্ন বার বার ফিরে ফিরে আসে আমার মনে— হরেনের বউ-এর এমন বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষণপ্রভা নামটি রাখলেন কে ? এতো কোন পণ্ডিত ব্যক্তি ছাড়া সম্ভবই নয়  ! এক আলোর রেখা… এক বিদ্যুৎবতী।

নূপুর গোস্বামী 

মূলত ফেসবুকেই লেখালেখি। কবিতা এবং গল্প লেখেন। অত্যন্ত দায়িত্বশীল পাঠিকা। সাম্প্রতিক লেখালেখির বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।

Wednesday 10 August 2022

সংখ্যা ত্রয়োদশ।। ১০ আগস্ট ২০২২ ।। বিবস্বান ।। রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য

 বিবস্বান 

রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য

সেলুনের আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে বিবস্বান আবিষ্কার করলেন, উনি তিন মিলিমিটার বেঁটে হয়ে গেছেন। দু-মিলিমিটার হাইট কমে যাবার পর নিজেকে একটু ছোটো লাগছিল। কিন্তু, তিন মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের পতন ওনাকে আতঙ্কিত করে তুললো। তাহলে কী এই তিনদিন ধরে উনি ক্রমশ: বেঁটে হয়ে যাচ্ছেন ? সেলুনের চেয়ারে ধপ করে বসে উনি ঘুমিয়ে পড়লেন। এতদিন জল ঘুম, বাথরুম -ঘুম, চিন্তা-ঘুমে আক্রান্ত ছিলেন। ঘুমের মধ্যে কথারা সিগন্যাল না পেয়ে বে-লাইনে চলে যেত। স্বপ্নরা সবুজ সিগন্যাল পেয়ে হুস হুস করে ছুটতো। মন দিয়ে উনি অনেক দিন ঘুমান নি। সেলুনের চেয়ারে বসে অনেক দিন পর মন দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। তাঁর মৃদু নাসিকা গর্জনের মধ্যেই মাথা, মুখ সব ন্যাড়া হয়ে গেল। যারা ভাবেন আতঙ্কে ঘুম চলে যায়, তাঁরা অবশ্যই বিবস্বানকে দেখে তাঁদের ভুল বুঝতে পারবেন।  

ঘুম থেকে উঠে পরিচ্ছন্ন বিবস্বান সেলুনের নিভন্তকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'আমি কী বেঁটে হয়ে গেছি ? ’

নিভন্ত মনে মনে ভাবলো অপ্রিয় সত্য কথা বলে কাস্টোমার খচানোর কী দরকার ? তাই একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, 'তা আবার হয় নাকি ছ্যার ? আপনি ঝেমন ছিলেন ত্যামন আছেন। ’

এবার বিবস্বান খেপে গিয়ে কলার চেপে ধরলেন। আশেপাশের কাস্টোমার ছুটে এসে বলে, 'করেন কী ? করেন কী ? ’

নিভন্তকে আগুন চোখে টাকা দিয়ে বেরিয়ে এলেন। এখনও বিশ দিন বাকি বিবস্বানের বত্রিশ বছর হতে। এরমধ্যে

ও যদি বেঁটে হতে আরম্ভ করে প্রতিদিন এক মিলিমিটার করে, তাহলে তো... 

বাড়িতে প্রমাণ সাইজের আয়নায় নিজের প্রমাণ সাইজ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন। এসময় বসুধার প্রবেশ। 

'কী দেখছো এতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ? '

'আমি কী বেঁটে হয়ে যাচ্ছি বসুধা ? ’

বসুধা থতমত খেয়ে খুব মন দিয়ে দেখতে লাগলো। 

'হ্যাঁ গো মনে হচ্ছে তো তাই। তুমি যেন একটু বেঁটে হয়ে গেছ। '

'মানুষ আবার বেঁটে হয় নাকি এ বয়সে? ও তোমার চোখের ভুল। '

'তা হবে হয়তো। তুমিই তো নিজে বললে, আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখছো...আমি অতশত বুঝি না। '

হাত মুছতে মুছতে বসুধা চলে গেল। 

রাস্তায় বেরিয়ে মেঘের সাথে দেখা। মেঘকে অনেক লম্বা মনে হচ্ছে। ঘাড়টা উঁচু করে মেঘের সাথে কথা বলতে বলতে, হঠাৎ ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা, 'আমাকে একটু সর্ট লাগছে ? '

মেঘ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন বিবস্বানের দিকে, 'তুমি নিজেকে কেমন বুঝছো ? '

বিবস্বান হকচকিয়ে বললেন, 'ঠিক, ঠিকই তো আছি। '

'তাহলে এতো ঘাড় উঁচু করে কথা বলছো কেন ? '

'একটু ঘাড়ের ব্যায়াম আর কি', উত্তরের অপেক্ষা না করে হন হন করে হাঁটা দিলেন। 

সামনেই একটা ডাক্তারের চেম্বার। কয়েকজন লোক বসে আছেন। চটপট ওখানে ঢুকে বলে উঠলেন। 

'আমার একটু এমার্জেন্সি আছে ভাই। প্লিজ.. ’

চারদিকে আকুতি নিয়ে তাকালেন। একজন বলে উঠলেন, 'ডাক্তারখানায় এসেছি যখন সবার এমার্জেন্সি। '

আরেকজন বললেন, 'যেতে দিন ওনাকে'। বসে থাকা তিনজন মাথা নেড়ে সায় দিলেন। দুজন চুপ করে বসে রইলেন। শুধু ঐ একজন আবার বলে উঠলেন, 'তা হয় না। '

একজন বিপ্লবীকে উপেক্ষা করে বিবস্বান ঢুকে পড়লেন ডক্টরের রুমে। 

'কী সমস্যা ? '

'আমি তিন মিলিমিটার বেঁটে হয়ে গেছি।’

'মানে ? ’

'মানে আমি তিন মিলিমিটার বেঁটে হয়ে গেছি। ’

'আমি তো আপনাকে আগে দেখিনি, তাহলে বুঝবো কীভাবে আপনি বেঁটে হয়ে গেছেন ? এই দেখলাম। আবার এক সপ্তাহ পরে আসুন। তখন যদি দেখি আপনি সত্যিই বেঁটে হয়ে যাচ্ছেন তবে কিছু টেস্ট দেব। আমার ফিস পাঁচশ টাকা। বাইরে জমা করে যাবেন। ’

'আপনি কী পাতলা পায়খানার রোগীকেও একই কথা বলেন ? ’

'বুঝলাম না। '

'পাতলা পায়খানা দেখে তারপর ওষুধ দ্যান ? 'বলেই আর দাঁড়ালেন না। ফিস না দিয়েই চলে গেলেন নদীর ধারে। 

বিবস্বান বসে আছেন নদীর ধারে, দেখছেন জলে কেমন ভেঙেচুরে যাচ্ছে তাঁর প্রতিবিম্ব। জলের কাছে এসে বুঝতে পারছেন, তিনি আসলে কখনও লম্বা হয়ে যান, কখনও বেঁটে, 

জল বিবস্বানকে দেখছে আর বলছে , 'এতো সংলাপ কেন ? এতো সংলাপ কেন ? '

দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, কেউ কাউকে বোঝাতে পারছে না...



রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য

ইংরেজির শিক্ষিকা রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য কবিতা ও গদ্য রচনায় সাবলীল। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'আঁধারের বাউল গান'। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর লেখা প্রকাশ পায়। রঞ্জনার লেখায় তাঁর নিজস্বতা স্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠে।

Wednesday 3 August 2022

সংখ্যা দ্বাদশ ।। ৩আগস্ট২০২২ ।। রূপময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠী ।। শুভাশিস দাশ

 রূপময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠী 

শুভাশিস দাশ

কলপাড়ের বাসনগুলো মাজতে মাজতে মিনু বলে ওঠে - কালকে কিন্তু একটু আগে যাবো বৌদি। আমাদের গ্রুপের মিটিং আছে ।

শহরতলির কাছেই গড়কুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মিনুর বাড়ি । গ্রামের মহিলাদের নিয়েই গড়ে উঠেছে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী । শুধু ওদেরই নয় এই পঞ্চায়েতে অনেকগুলো স্বনির্ভর গোষ্ঠী আছে। কোনোটা গোলাপ ফুল, কোনটা সারদা দেবী ইত্যাদি ইত্যাদি । সকালের চায়ে চুমুক দিতে দিতে বৌদি উমা দেবী উত্তর দিলো - মাসে তোদের কটা মিটিং থাকে রে ?

ট্যাপের জলের ফোর্সটা কমিয়ে দিয়ে মিনু বলে- এটা লোন নেবার জন্য এসপেসাল মিটিং।

তুই কি লোন নিবি ?

না বৌদি । অতো লোন নিলে শুধবো কী করে ?

দুটো বাড়ির কাজ করে কোন মতে বেঁচে আছি গো । মিনু বাসনগুলো সাইড করে রাখতে রাখতে কথাগুলো বলে ।

এই নে, চা আর রুটিটা খেয়ে নে । চায়ের কাপটা আর দুটো রুটি মিনুর দিকে এগিয়ে দেয় উমা দেবী ।

মিনু মনে মনে ভাবে এ বাড়ির বৌদি সত্যিই খুব ভালো । এই তো সেইবার কী প্রচন্ড জ্বর । বৌদি কোনো কাজই করতে দিলো না । বরং নিজে হাতে রেঁধে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ দিয়ে ছেলের জন্য খাবার দিয়ে সিটি রিকশা ডেকে বাড়ী পাঠিয়ে দিলো। চারদিন আসতে পারিনি । ফোন করে খোঁজ নিয়ে ছেলেকে ডেকে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে ।

কিরে কী ভাবছিস ? 

উমা দেবীর কথায় মিনুর ঘোর কাটলো - না না কিছু না ।

শোন, কাল যদি সময় না পাস তবে এখান থেকে খেয়ে যাবি আর তোর ছেলেকে বলবি খেয়ে যাবে।

না না বৌদি, আমি সকালে সেদ্ধ ভাত করে যাবো। তোমার আর ঝামেলা করতে হবে না গো ।

এই বলে মিনু বেরিয়ে যায় ।

পঞ্চায়েতের হল ঘর ভর্তি মহিলা । অনেকেই মাস্ক পরে আসেনি । সারাদিন কুড়িটা গ্রুপের মিটিং। বিগত বছরের সব হিসাব কিতাব হবে । রূপময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠির মহিলাদের গ্রুপ লিডার মানদা রায় । গাঁয়ের পড়াশুনা জানা মহিলা । বয়স প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই । দশ জনের গ্রুপে মানদা রায়ই সিনিয়র তাই ওকে সবাই মান্যি করে ।

কুড়ি জনের সিরিয়ালে রূপময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সিরিয়াল সাত । ঠিক বেলা এগারোটায় মিটিং শুরু হলো । জেলা থেকে কর্ম কর্তারাও আজ এসেছেন । দিলীপ বিশ্বাস নামের একজন অফিসার প্রথমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য নিয়ে বলতে উঠে বললেন-আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যাঁরা লোন নিয়ে কোন কাজ করেন না। সরকারি সাহায্য কিন্তু মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষে দিয়ে থাকে । আমরা লক্ষ করছি লোন নেওয়া মানে ঘরে দামী আসবাবপত্র আনা আর কদিন বসে বসে মাছ-মাংস খাওয়া । এটা এবার বাদ দিতে হবে । আপনারা সবাই জানেন যে বিগত দুটো বছর করোনা ভাইরাস আমাদের মতো পরিবার গুলোকে পথে বসিয়েছে আর সেই কারণে আজকে আপনাদের লোনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে । এবারে সাবসিডিটা বাড়িয়ে দিয়েছেন সরকার । তবে আপনাদের গ্রুপের মধ্যে দু 'একটি গ্রুপ আছে যাঁরা নিজেরা অনেকটাই স্বনির্ভর হয়েছে এবং সামাজিক কাজকর্মও করছে। আমি রূপময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এই জন্য যে তাঁরা করোনা কালে তাঁদের নিজস্ব ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে গাঁয়ের দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে ।জেলা পরিষদ থেকে আজকে এই মিটিং এ তাঁদের পুরস্কার দেয়া হবে ।

মিটিং শুরু হয়ে গেলো । বেলা তিনটে নাগাদ ডাক পড়লো রূপময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর । মানদা রায় আজ চুলে তেলপাট্টা করে এসেছে । মিনু দিদা বলেই ডাকে মানদাকে । বললো-যাও এবার পুরস্কারটা নিয়ে এসো । বেশ তো সাজিচেন !

গ্রুপের সবাই এগিয়ে গেলো। গ্রামপ্রধান শশী ভূষণ পুরস্কারের অর্থ মূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা চেক তুলে দিলো মানদা রায়ের হাতে ।

প্রধান সাহেব বললেন - আরো ভালো করে কাজ করেন ।

পরদিন কাজে এসে মিনু বৌদিকে লোক দেখতে বলে ।

উমা দেবী বলে-কেন রে কাজ ছেড়ে দিবি?

হ্যাঁ বৌদি, আমরা আমাদের গ্রুপের থেকে একটা

ছোট কারখানা করবো । আমাদের ভালো কাজের জন্য সরকার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েচে ।

আর লোকের বাড়ি এঁটো বাসন মাজতে হবে না। সেই ছোটবেলা থেকেই এই কষ্টে আছি । ছেলেটা বড় হচ্ছে । ওকেও এই কারখানার সাথে রাখবো ভাবছি ।

ঠিক আছে । এই বলে উমা দেবী বলেন ভালো থাকিস । সময় পেলে ঘুরে যাস ।

দেখতে দেখতে ছ'মাস কেটে গেলো । গড়কুড়া গ্রামের রূপময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বানানো ধূপকাঠি ছড়িয়ে গেলো অনেক জায়গায়। একদিন দুপুর বেলা হঠাত্‍ মিনু এসে হাজির উমা দেবীর বাড়িতে।

গেট খুলতেই উমা দেবী অবাক - আরে মিনু এই দুপুর বেলা ? আয় ভিতরে আয় ।

ড্রয়িং রুমে বসে মিনু বললো বৌদি একটু জল খাবো ।

উমাদেবীর মেয়ে বৃষ্টি জল নিয়ে এসে বললো পিসি কেমন আছো ?

ভালো রে মা।

এই দুপুরে কই বেরিয়েছো ?

এখন সকালের দিকটা ধূপকাঠি দিয়ে বেড়াই আর বিকেলের দিকে কাটি বানানো, প্যাকেটিং করি। এই বলে মিনু ব্যাগ থেকে দু প্যাকেট ধূপকাঠি বের করে বৃষ্টির হাতে দিয়ে বললো-ভালো লাগলে বলিস দিয়ে যাবো ।

পাশ থেকে উমা দেবী বললো-দাম কতো রে ?

মিনু বললো-নানা এটা দিলাম । জ্বালিয়ে দেখো । প্যাকেটটি হাতে নিয়ে উমা দেবী দেখে তাতে লেখা রূপময়ী সুগন্ধি ধূপকাঠি । ভাবতে থাকে মানুষ তো এভাবেই বড় হয় । যাক এঁরা একটা বাঁচার ঠিকানা পেলো এতোদিন পর ।

এখন আর মানদা রায় তেমন ভাবে চলতে পারে না । হঠাত্‍ স্ট্রোক হয়ে যাওয়ায় প্রায় শয্যাশায়ী ।

ডিসেম্বরের শেষ দিক । শীত এবার জাঁকিয়ে বসেছে । বিছানায় শুয়ে সন্ধ্যের খবরে চোখ রাখতেই মানদা রায় চিত্কার করে উঠলো। ছেলের বউ বুল্টি ছুটে এলো । বললো মা-কী হয়েছে ?

ওই শোন। বুল্টি বিশেষ বিশেষ খবরের অপেক্ষা করলো। একটু পরেই শুনতে পেলো এবারের পদ্মশ্রী পাচ্ছেন কোচবিহার জেলার রূপময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কর্ণধার মানদা রায় । প্রজাতন্ত্র দিবসে তাঁকে এই সম্মান তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি ।

মানদা দেবীর দু'চোখ বেয়ে তখন গড়িয়ে পড়ছে জল । কত কষ্টে এই গ্রামের অক্ষরজ্ঞানহীন মহিলাদের বুঝিয়ে গড়ে তুলেছিলাম এই দল । দশ জনের গ্রুপের সাত জনই লোকের বাড়িতে বাসন মাজতে যেত । যাক ভগবান আছেন । বালিশের পাশে রাখা গীতা তুলে বুকে রাখলেন মানদা । মনে মনে বললেন কর্ম করে যাও ফলের আশা করো না।

ফেলে আসা দিনগুলির কথা ভাবতে ভাবতে স্মৃতির অতলে তলিয়ে গেলেন রূপময়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেত্রী মানদা রায় ।


শুভাশিস দাশ 

বয়স ৬৩ । শৈশব থেকেই লেখালিখির চর্চা । নিয়মিত লেখা চলছে চার দশকের উপর । দৈনিক সহ দুই বাংলার লিটিল ম্যাগ গুলোতে লেখা প্রকাশ হয়।আকাশবাণী শিলিগুড়ি বেতারের গীতিকার। গল্প, কবিতা ও ছড়া মিলিয়ে প্রকাশিত বই-এর সংখ্যা চোদ্দটি। জন্ম পূর্ববঙ্গের গাইবান্ধা শহরে । বর্তমান স্থায়ী বসবাস দিনহাটা, কোচবিহার।


প্রকাশিত পর্ব

ঊনবিংশ সংখ্যা ।। ২১সেপ্টেম্বর।। নরকের প্রেমকাহিনী ।। তন্ময় ধর

নরকের প্রেমকাহিনী     তন্ময় ধর  'নরক !! না না, এমন নামের ছেলের সাথে কিছুতেই তোমার বিয়ে হতে পারে না' কমল মিত্রসুলভ স্বর, দৃষ্টি ও আভি...